Friday, September 16, 2016

বিদেহি প্রেমিকা- দ্বিতীয় পর্ব

             বিদেহি প্রেমিকা
      #Pradip Kumar Biswas
    দ্বিতীয় পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
প্রথম পর্ব লিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_21.html

রান্নাঘরের কাছে ছোট ভাঁড়ার ঘরেই অনিলের একক শয্যা।আমরা এতে সানন্দে রাজি হয়েছে ওর অনিয়মিত আসা যাওয়া আর ওর বাহন ট্রান্সরিসিভারের নৈশ রাদেভুর কথোপকথনের আশঙ্কায়
গভীর রাত অবধি  ও ফেরে নি দেখে সবাই একটু উদ্বেগে ছিলাম । কোথাও কোনও থিয়েটারের মহলাতে আটকে আছে হয় তো ।
পরের দিন আমাদের ট্রেনিং ছিল জি এস আই চৌরঙ্গী হেড অফিসের রিমোট সেন্সিং ল্যাবে অনিলের সাথে ওখানেই দেখা হল ।
স্বভাবসিদ্ধ অসাধারন নিপুণতায় ও ক্ষিপ্রতায়  ও ওর অংশের কাজটা  তাড়াতাড়ি  শেষ করে ট্রেনিং ইন চার্জের কাছে ছুটি নিয়ে ল্যাব থেকে বেরিয়ে যাবার সময় বলে গেল “সন্ধ্যের সময় দেখা হবে তোদের সাথে” ।
ল্যাবের কাজটা বেশ শক্ত ছিল এখনকার সময়ের মত তখন  কম্পিউটার সাপোর্ট এত গভীরে ছিল না টোপোগ্রাফি বোঝবার কাজটা নিজের হাতে অঙ্ক কষে গ্রাফ প্লট করবার প্রোগ্রামিং তৈরি করে তাতে অঙ্কমানগুলো প্রবেশ করিয়ে তবে কাজ শেষ হত
শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে দিনের শেষে আমরা ফিরছি ভাড়া-বাড়িতে । সকলেই গজরাচ্ছি যে সারাদিনের  এই হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর  যে একটু স্নান করে শরীর মন ঠাণ্ডা করে  নেব সবাই, তার উপায় নেই। 
আমরা পৌঁছালেই ভ্যাম্পটা জলের ধারা সরু করে দেবেকিছু বলতে গেলে সে আরো শয়তানি করে মাঝ রাতে বিদ্যুতের কানেকশন কেটে দেবে।
মোড়ের মাথাতেই  আমাদের ভাড়া-বাড়ি । দূর থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাড়ির সামনে একটা বেশ বড় জটলা
বৃদ্ধ জয়হরির কিছু হল কি?মাঝে মাঝে শর্ট সার্কিটের দরুন সেই লেবু লঙ্কা মাড়িয়ে ফেলার ঘটনার দিন  দিন থেকে একতলায় কলিং বেল থেকে থেকে  নিজে নিজেই বেজে ওঠে।  সেইটা থেকে ললিতা ভ্যাম্পের কিছু হল না তো?
বাড়ির সামনে আসতেই  দোতলায় যাবার জন্য সিঁড়ির প্যাসেজে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন সামান্য সরে গেল ।  সেই পথে যাবার জন্য একতলার সদর দরজার সামনে এসে যা দেখলাম  তাতে গা সিউরে উঠলো ।
মস্ত বড় টাটকা সবুজ মানকচু পাতার ঠিক মাখখানে একটা বীভৎস আকৃতির বিরাট নরমুণ্ডের কঙ্কাল । তার মাথায় একটা ছোট প্রদীপ জ্বলছে ।
নরমুণ্ডের ঠিক তলাতে আড়াআড়ি করে অর্থাৎ ইংরেজি “X” অক্ষরের মতো করে,   দুটো লম্বা হাড় রাখা আছে তার তলায় রয়েছে দুটি থ্যাঁতলানো  টাটকা  লেবু ।
নরমুণ্ডে, হাড়গুলোতে এবং সবুজ মানকচু পাতার জায়গায় জায়গায়   টাটকা রক্তের ছোপ দেখা যাচ্ছে পাতার চার প্রান্তে দগদগে লাল রঙের তেলে সবুজ রঙের সলতে দেওয়া প্রদীপ জ্বলছে ।
জনতার গুজগুজ ফিসফাসে শোনা গেল বাড়ির পেছন দিকের বাগানে লেবুগাছ তলাতেও নাকি অবিকল এই রকম একটি ভয়ঙ্কর-দর্শন কঙ্কাল করোটি   সমেত মানকচু পাতা রাখা আছে ।
জনতার নিজেদের আলাপ আলোচনায় জানলাম বিশাল মানকচু পাতাতে নর-করোটি, “x” এর মত করে রাখা  লম্বা হাড় এবং আরও সব জিনিষ যা দেওয়া আছে এই পুরো সেটটির নাম “আস্থানা”। খুব বড় ওস্তাদ গুনিন ছাড়া এই রকম  আস্থানা কেউ করতে পারেন না।
আরো শুনতে পেলাম যে  যার বাড়িতে এই আস্থানা পাতা হয় সেখানে বিপজ্জনক অশরীরীরা এসে বাস করে এবং বাড়ির মালিকদের অতি শীঘ্র কোনও বড় বিপদ হবেই এবং তা আটকানো খুব কঠিন এইটা অনেকে বিশ্বাস করেন বা জানেন । 
জয়হরি ভালোমানুষ প্রবীণ লোক তাঁকে মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর বাইরে করতে দেখা গেল কিন্তু ললিতা ভ্যাম্প বাড়ির ভেতর থেকে  একটানা  কেঁদে চলেছেন আর বলছে “ কে আমাদের এই সর্বনাশ করল? আমরা তো কারো কোনও ক্ষতি করি নি”।
শেষ কথাটায় আমার নিজেদের মধ্যে চাওয়া-চাওয়ি করতে করতে সকলেই বোধহয় মনে মনে বলতে থাকলাম “কর নি আবার? এক মাস ধরে রোজ মর্জি মাফিক জল আর লাইট কেটে দিয়ে আমাদের জিনা হারাম করে দিয়েছ”।
পাড়া পড়শি সবাই এসেছে কিন্তু কঙ্কাল-করোটির আস্থানা ডিঙ্গিয়ে যাবার হিম্মত কারো হয় নি ।
একটা সমবেত গুঞ্জন শুনে সেদিকে চোখ রাখতেই দেখি লাল পুরোহিত আসছে ।এখানের লোকে তাঁকে সেই নামেই ডাকে।  
মোড়ের মাথায় অশ্বত্থ গাছতলার কালীমন্দিরে একজন লাল কাপড় পড়া পুরোহিত বসে থাকে।কারণ-বারির প্রসাদের কল্যাণে তার চোখ-জোড়া ও সব সময় লাল হয়ে থাকে ।   পাড়ার লোকজন  কয়েক জন সেই লাল পুরোহিত কে  নিয়ে আসছে ধরে ধরে অনেকটা জোর করেই

No comments:

Post a Comment