সবিনয় নিবেদন
#প্রদীপ কুমার বিশ্বাস
# ভুতের গল্প # Bengali ghost story
অশরীরীদের নিয়ে
কাহিনী লেখবার আগে মাননীয়/ মাননীয়া পাঠক/ পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে এই অতি ক্ষুদ্র লেখকের কিছু বিনীত নিবেদন আছে।
১।আমার গল্পগুলি অশরীরীদের অনুভব করবার প্রয়াসের ভিত্তিতে সামান্য কল্পনা মিশিয়ে লেখা যাতে কোনও রকম মিথ্যে ভয়ের কাহিনী
নেই ।
২। উত্তর এবং উত্তর পূর্ব হিমালয়ে জল-বিদ্যুৎসম্ভাবনা এবং
ভুস্খলনের(landslide) কারন অনুসন্ধানে দীর্ঘসময় থাকবার কালে একাধিক সাধক মহাত্মার সঙ্গ লাভ
করেছি। তাঁদের কাছে জেনেছি
ক) সবচেয়ে বড় অশরীরী হলেন ঈশ্বর। তাঁকে দেখা যায় না তবে বিশেষ ধরনের মানসিক ব্যায়াম
নিত্য নিখুঁত ভাবে করতে করতে তাঁর একটু সামান্য অংশকে অনুভব করতে পারবার সম্ভাবনা
আছে ।
খ)ঠিক এই ভাবে ভুত বা অশরীরী কে দেখা যেতে পারে না তবে
অনুভব করা যেতে পারে।যারা দেখেছেন বলেন তারা আসলে অলীকছায়া দর্শন করেন বা hallucination দেখেন বা কাল্পনিক ত্রিমাত্রিক
অসদবিম্ব দেখেন।
যারা অশরীরীদের অস্বীকার করেন তাঁরা বোধ হয় সব চাইতে বড় অশরীরী
ঈশ্বরকেও অস্বীকার করেন।
গ)ছোটো মাপের হঠযোগী এবং সাধনা পথ থেকে বিচ্যুত এই রকম
কেউ কেউ লোকালয়ে, শ্মশান, পোড়ো বাড়ি ইত্যাদি জায়গায় এসে সময়, পরিবেশ, মানসিক
অবস্থা ইত্যদির সুযোগ নিয়ে সম্মোহনের দ্বারা এই hallucination দেখাতে পারে।
আমরা অনেকেই ভূত দেখার যে গল্প শুনি অমাবস্যার নিশুতি
নিশিতে অনেক শ্মশানে, পোড়ো বাড়িতে তা এই কারনে হতে পারে।এই সব ক্ষেত্রে আমরা
নিজেরা নিজেদের মনকে আগে থেকেই প্রভাবিত করে নি। লক্ষ্য করা যেতে পারে কেউ দিনের
বেলা ওই সব জায়গাতে ভুত দেখতে পাই না কেন না মনকে তখন প্রভাবিত করতে পারি না।
এই কাজ অশরীরী খুব কম ক্ষেত্রে নিজে করে কেননা এটা করার
পর তাকে অনেক মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলে তীব্র যাতনার সামনে পড়তে হয়।
কিন্তু দুটো ক্ষেত্রেই যা দেখি তা ত্রিমাত্রিক অসদবিম্ব
মাত্র।এটা সত্যি সত্যি ভেবে ভয় পেয়ে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের শারীরিক বা মানসিক
ক্ষতি করি ।
ঘ) পূজা অনুষ্ঠান ইত্যাদি এক ধরনের প্ল্যানচেটের মত ।
ঠিক ভাবে করলে এর দ্বারা ঈশ্বরকে আবাহন করা যেতে পারে।
ঙ)দেহ হল ঘড়ির কেসিং এর মত আর আত্মা হল ঘড়ির মেসিনটা।
শরীরটা অকেজো হলেই আত্মা শরীরকে ত্যাগ করে টুকরো টুকরো হয়ে ফিরে যায় পরমাত্মার
কাছে।
চ)কারো ক্ষেত্রে এই আত্মা অবিকৃত হয়ে শরীরী দুনিয়াতে
থেকে যায় । তাকেই আমরা ভুত বা অশরীরী বলি । মৃত্যুর পর তার পুরো শরীর ধবংস হয়ে যায়
। যার হাত পা দাঁত কিছু নেই সে কারো গলাটা টিপবে বা ঘাড় মটকাবে কি করে?
ছ)সত্ত্বা তিন স্তরের সাত্ত্বিক, রাজসিক আর তামসিক । মৃত্যুর পর
অশরীরী সত্ত্বার একমাত্র লক্ষ্য ঐশ্বরিক জগতে প্রবেশ যা সাত্ত্বিকের পক্ষে সহজ
সাধ্য কিন্তু ক্রমান্বয়ে কঠিন রাজসিক এবং তামসিক সত্ত্বার ক্ষেত্রে । কিন্তু এরা
অশরীরী হয়েই সাধনায় মগ্ন থাকেন আত্ম- উন্নয়নের জন্য।
জ) হিংস্র
চরিত্রের লোক যদি অশরীরী হয় তবে সে তার নিজের তামসিক সত্তার উন্নয়ন করে সাত্ত্বিক
অবস্থায় উন্নীত হতে চায় । প্রতিশোধ, খুন-খারাবি, নীচতা এই সবের মধ্যে আর থাকে না।
অনেকটা এই কারনেই মৃত্যুর আগে অনেক তামসিক সত্তা নিজের খারাপ কাজগুলি ছেড়ে দেয় । কাজেই
বদ লোকেরা যদি অশরীরী হয় তবে তাদের যে ভয়ঙ্কর রুপ গল্পে দেখান হয় তা ঠিক নয় ।
ঝ)অশরীরী হয়ে শরীরী জগতে থাকাটা অনেকটা ডায়াবেটিস রোগীকে
মিষ্টির দোকানে বসিয়ে রাখার মতো। অসহায় অশরীরীরা এই নিদারুন কষ্ট থেকে
মুক্তি পেতে চায় । কারো ক্ষতি করে বা সম্মোহিত করে কোনও শরীরী আকারে হ্যালুসিনেসন দেখিয়ে অনর্থক নিজের শক্তি ক্ষয় করে না।
ঞ)অশরীরীদের নিয়ে বেশির ভাগ গল্পে তাঁদের দুঃখ,বেদনা বা
জ্বালাযন্ত্রণার কাহিনী কমই থাকে বেশিটাই তাঁদের নিয়ে লেখা অলীক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যে
ভয়ের কাহিনী যা শুনে পাঠক-পাঠিকা ভয়ে কাঁপতে থাকে ।
ট)তবে এটাও সত্যি যে ভয় পেতে
আমরা সকলেই ভালবাসি, ভয়ের শিহরনে মানসিক আনন্দ এবং উত্তেজনা পাই ।ভুতের অলীক গল্প এই কারনে এত
জনপ্রিয়।
উপরোক্ত কথাগুলি, হিমালয়ে ভূতাত্বিক
সমীক্ষার কাজ করবার সময়, একটু একটু করে আমি জেনেছি যোগী মহারাজদের সংস্পর্শে এসে যা আমি সুধী
পাঠক-পাঠিকাদের মধ্যে ভাগ বা সহ-বণ্টন(share) করলাম।
আমি আবার বলি অশরীরীদের আমার লেখা কোনও গল্পে ভয় দেখানো
নেই কেননা অনুভব করতে জানলে বোঝা যায় যে অশরীরীরা
তাঁদের নিদারুন দুঃখ, বেদনা আর যন্ত্রণা নিয়ে আছেন আমাদের অলক্ষ্যে।
আমরা যদি সেই সব অনুভব না করতে চাই, নিজেদের মধ্যে ভাগ
বা সহ বণ্টন না করি তবে তা চিরকাল আমাদের
অলক্ষ্যেই থেকে যাবে। রয়ে যাবে তাঁদের নামে রক্ত শুষে নেবার বা ঘাড় মটকে খাবার বা
কাঁচা মাছ খেয়ে নেবার মিথ্যে অপবাদ।
মিথ্যে এই জন্য কেন
না মৃত্যুর পর পুরো দেহ ধবংস হয়ে গেছে। হাত, পা, দাঁত, গলা, পাকস্থলি কোনও
দেহ-যন্ত্র যেমন নেই তেমনি রক্ত শুষে নেবার, মাছ খেয়ে নেবার, বা ঘাড় মটকাবার কোনও
উপায় তাঁদের আর নেই।সেই জন্য তাঁদের নিয়ে ভয় পাবার কোনও কারণ নেই যা আমরা নিজেরাই
তৈরি করি।
তিনটি কাহিনী আপনাদের শোনাবার ইচ্ছে আছে। প্রথম কাহিনীটি
ছাত্রবয়েসের, যখন অশরীরীদের নিয়ে কিছু জানতাম না। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গুলি আরও পরের
দিকের যখন অশরীরীদের সম্পর্কে যোগী মহারাজদের সংস্পর্শে এসে অতি সামান্য কিছু
জেনেছি।
পড়ার সুবিধের জন্য প্রতিটি গল্প লিঙ্ক দেওয়া পর্বে পর্বে
ভাগ করে সব পর্ব গুলি এক সাথে দিয়েছি। এই সব গল্প গুলি আমার ব্লগে আছে । সেখানেও
পর্বে-পর্বে ভাগ করে দিয়েছি তবে চাইলে পর পর একসাথে পড়তে পারবেন সেখানে। প্রিন্টটা
ও ভালো, হয়তো পড়তে খারাপ লাগবে না ।
এই পোস্টিং এর পরেই দিলাম প্রথম গল্পটি নয়টি পর্বে ভাগ করে কিন্তু একসাথে এক দিনে সামান্য সময়ের হেরফের হয়ে একের পর এক। আপনারা সাথে থাকুন, পড়ুন,
মন্তব্য করুন, তিরস্কার করুন, সব মাথা পেতে নেব।
No comments:
Post a Comment