Friday, September 16, 2016

বিদেহি প্রেমিকা ( চতুর্থ পর্ব )

                  বিদেহি প্রেমিকা
      #Pradip Kumar Biswas
    চতুর্থ পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
(তৃতীয়পর্বেরলিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_13.html)
গুরুজি চোখ বন্ধ করে  হাতের মুঠো বন্ধ করে কি সব মন্ত্র পাঠ করলেন। অবোধ্য মন্ত্র কিন্তু সুললিত মেঘমন্দ্র আওয়াজে আমরা সবাই যেন সত্যি সত্য মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম।
গুরুজি এবার হিং ক্রিং জাতীয় কিছু বলেন আর একটা বড় থলে থেকে লাল নীল হলুদ রঙের কিছু শস্যদানা মতো জিনিষ এক বার নর-করোটির দিকে ছুড়ে মারেন আবার পরক্ষণেই সেই গুলো বাড়ীওয়ালা দম্পতির দিকে ছুড়ে মারেন।
কিছুক্ষণ এইরকম করার পর কিছু সাদা রঙের গুলি  মারলেন নর করোটিতে । লাল রঙের তেলে সবুজ সলতে লাগান দীপগুলো নিভে লালসবুজ ধোঁয়া বেরতে লাগলো। এবার নর করোটি থেকেও সাদা ধোঁয়া উঠতে সুরু করল। জনতা এই সব দেখবার জন্য ঠেলাঠেলি করতে লাগলো ।
গুরুজি বলেন “ অশুভ আত্মারা আস্থানা থেকে যেতে বাধা পেলে  তারা যাদের আঘাত করবেন ক্ষতি তাঁদেরই হবে। আপনারা ঠিক করে নিন কি বেছে নেবেন?”
গুরুদেবের জলদ গম্ভীর কণ্ঠের নিষেধাজ্ঞা  শুনে জনতা শান্ত হল, ঠেলাঠেলি বন্ধ হল 
এবার দেখি মানকচু পাতাটা থেকে ধোঁয়া উঠছে আর সেই ধোঁয়া একটু ছড়াতেই গুরুজি  কি সব মন্ত্র পাঠ করেন আর সদানন্দের এগিয়ে দেওয়া একটা পুঁটলি থেকে সরষে দানা  খুলি কঙ্কাল আর হাড়গুলোর ওপর  ছুড়ে মারেনএকটু পরে মানকচু পাতার জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলে উঠে নিভে গেল ।
এই সব দেখে ললিতাভ্যাম্প  ভয়ে অ্যাঁ অ্যাঁ চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। গুরুজি তার কমণ্ডলু থেকে ওনার কপালে জল ছিটিয়ে দিয়ে পাসে বসা জয়হরিকে একটি ছোট হোমিওপ্যাথি শিশি  দিয়ে বলেন “দশ ফোঁটা খাইয়ে দিন । এখুনি জ্ঞান  ফিরে আসবে”
গুরুজি এই অবসরে উঠে চললেন বাগানের দিকে । অবাক কাণ্ড, বাগানের আস্থানাতেও দীপ নিভে গেছে কিন্তু একটা ধোঁয়াটে অন্ধকার চারদিক ছেয়ে রয়েছে ।
“এবার তোর খেলা শেষ রে গুনিন যা এবার পালিয়ে যা নয়ত এমন সাজা দেব, দেখবি তার নমুনা?”গুরুজি এবার  রান্নার হলুদগুড়ো মতো কিছু পাউডার নর-করোটির আস্থানায় ছুড়তেই এক বিকট কণ্ঠে কে যেন খুব জোরে আর্ত চিৎকার করল “ ওরে বাবাগো জ্বলে গেলাম রে, ওরে এবার ছেড়ে দে রে” ।
“ ঠিক আছে যা তুই। তবে আর কোনওদিন আসবি না। যা যেখানে ছিলি”
চিল যেমন ছোঁ মেরে মাছ উঠিয়ে নেয় অনেকটা সেই কায়দাতেই গুরুজি বাগানের লেবুতলায় পাতা আস্থানা হাতে দ্রুত  তুলে নিলেন।
সদানন্দ ক্রমাগত চেচিয়ে যাচ্ছে  “গুরুজির হাতে আস্থানা আছে। যে তাঁকে ছোঁবে তাঁর অমঙ্গল হতে পারে”
এই কথায় কাজ হল । গুরুজির সামনের ভিড় পাতলা হয়ে গেল। উনি এবার একতলার সদর দরজায় এলেনসেখান থেকে আস্থানা তুলে ফেলার আগে বাড়ির মালকিন দম্পতি জয়হরি ও ললিতাভ্যাম্প তাঁকে সাষ্টাঙ্গ প্রনাম করতে গেলে সদানন্দ নিষেধ করলে।
ও বলে “ আপনারা বরং শুনে নিন গুরুজির কথা। উনি যা বলবেন সেইটা বরং পালন করবার চেষ্টা করুন”
গুরুজি বললেন “ আপনার কাছে আশ্রিতজন, সে পশু- পাখি বা কাজের লোক এইরকম যাইই হোক না কেন কখনো তাঁদের কষ্ট দেবেন না। বরং তাঁদের কষ্ট লাঘব করবার চেষ্টা করবেন এছাড়া কখনো কারো দুঃখের বা কষ্টের কারণ হবেন না। আপনাদের ঘর পুরো বেঁধে দিয়ে গেলাম । কিন্তু যা বললাম তা যদি পালন না করেন তবে অশুভ আত্মা আবার ফিরে আসবে শতগুন শক্তিশালী হয়ে । কি করবেন তা নিজেরা ঠিক করে নিনআস্থানা বিসর্জন দিয়ে আসি গঙ্গা তীরে ”
জয়হরি- ললিতা দম্পতি তাঁকে প্রনামি দিতে গেলে সদানন্দ হাঁ-হাঁ করে এগিয়ে এলো । “গুরুজি যা করেন স্বেচ্ছায় করেন । কারো কাছে  কোনপ্রকার টাকাপয়সা বা কোনও কিছুই  স্বীকার করেন না । উনি হিমালয়ে থাকেন এক ভক্তের ডাকে এসেছিলেন, আজ রাতেই ফিরে যাবেন এখন এক জোড়া আস্থানা নিয়ে উনি বিভোর হয়ে ওনার গুরুকে স্মরন করছেন । কেউ ওনাকে বিরক্ত করবেন না”।
গুরুজি আর সদানন্দ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নিজদের দুধ সাদা  এম্বাসডরে গঙ্গার ঘাটের রাস্তার দিকে কর্পূরের মত উবে  গেলেন ।
গুরুজির আদেশ ললিতা বাড়িওয়ালী অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। সেই থেকে শুধু আমরা কেন আমাদের পরেও কোনও ভাড়াটে জল আলো নিয়ে কোনও পরিকল্পিত অসুবিধেতে পড়েন নি । কিন্তু এই গল্পের নটে গাছটি কিন্তু এখানেই মুড়োয় নি ।
আমি আর আমার এক সহপাঠী বন্ধু এই সব কাণ্ড-কারখানা দেখার পর পাড়ার দোকানে একটু চা জলখাবার খেয়ে দোতলায় ফিরে সেইটাই দেখলাম।

No comments:

Post a Comment