Friday, September 16, 2016

বিদেহি প্রেমিকা(সপ্তম পর্ব)

                 বিদেহি প্রেমিকা(সপ্তম পর্ব)
ষষ্ঠপর্বেরলিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_5.html
      #Pradip Kumar Biswas
    সপ্তম পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
অর্ধ অচেতন ললিতাভ্যাম্প ওঠে  কি করে? কিন্তু ভৈরবী থামবার নয় । সবাইকে অবাক করে দিয়ে এবার সে ললিতা ভ্যাম্পকে মুড়ো ঝাঁটার একবাড়ি মারে ।
ককিয়ে কেঁদে ওঠে ললিতা ভ্যাম্প “ওরে বাবাগো আমায় আর মেরো না গো।আমি জীবনে কারো কোনও ক্ষতি করব না. আর কারো দুঃখের  কারন হব না”
এই বলতে বলতে উঠে নিজের বাড়ির দিকে টলতে টলতে যেতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে লেবুগাছকে  জড়িয়ে ধরে  গাছতলাতেই পড়ে যায় আর সেই সাথে ওর ধাক্কাতেই হয়ত দুটো পাকা লেবু ওর মাথার কাছে গড়িয়ে পড়ে। এইসব দেখে জয়হরি উতলা হলে লাল পুরুত তাকে আশ্বস্ত করে।
লেবু জোড়া হাতে নিয়ে খল খল করে হেসে ওঠে ভৈরবী । “গেছে এবার হারামজাদি। ভৈরব এবার এই লেবু দুটো এখুনি কেটে দে। ভুতনিটার খেল খতম হয়ে যাক। ”
ভৈরব মাথা নেড়ে বলে “নারে, এই পেতির আস্তানা জড় থেকে শেষ করতে হবেসে ব্যবস্থা করছি। বাবুর যেন আবার কোনও বিপদ না হয়”   
মহিলারা যারা এতক্ষণ বাগানের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ভিড় করে তারা ললিতাকে ধরাধরি করে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।
জয়হরিকে লেবু গাছ তলাতে আনতেই সে এবার ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠে “ এই সব আমার দোষ, আমার দোষ।আমার বউ  কাউকে  শান্তিতে থাকতে দেয় নি। ছেলেটা তো কবে পালাতে বাধ্য হয়েছে বউ নিয়েআর আমি! সব চুপচাপ  দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখেছি।”
আমরা স্তব্ধ হয়ে শুনি, উৎসুক জনতা যারা  এতক্ষণ ওঝার খেলা  দেখতে ভিড় করেছিল তাদের মধ্যেও এই নিয়ে চাপা গুঞ্জন ওঠে।
আমরা ভাবি জয়হরি এই সব কি বলছে? তাহলে ললিতার স্বভাবটাই এই রকমের? আমরাই শুধু নই এই মহিলা তো ওর নিজের ছেলে-বউকেও ছাড়ে নি । ও তাহলে সত্যিই ভ্যাম্প।
ভৈরবী, তান্ত্রিক আর লাল পুরুত এই তিন ঠগির খেলা মনে মনে খারাপ লাগলেও এবার মনে হল ভালই করেছে।  সবার সামনে ভুতের নামে এই রকম ঝাঁটাপেটা ওর খাওয়া দরকার ছিল।
লাল পুরুত বলে ওঠে “ওসব নিয়ে আর আপনি ভাববেন নাউনি যা করেছেন সব একটা পেতির প্রভাবে ।তাকে আমরা গিন্নি মায়ের শরীর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। এর সাথে আপনার পুরো ঘর এখন আমরা বেঁধে দিয়েছি শুধু সামান্য একটু কাজ বাকি আছে এখন ।”
এবার তাহলে জয়হরিকেও ঠ্যাঙাবে নাকি? দেখি ভৈরবী আর তান্ত্রিক কালো রঙ লাগানো মোরগ বা মোরগ ও মুরগির পুরো দলটাকেই নিয়ে আসছে।
ভৈরবী তার রাতপ্রহরের শেয়াল-ডাকা গলায় উচ্চস্বরে বলে “পেতিটা  লেবুগাছে আর না ফিরতে পেরে এই মোরগগুলোর ওপর ভর করেছে ।  এই বার সবকটা মোরগকে জয়তারা বলে  বলিদান করব তাতে পেতি আর পালাবার পথ পাবে না । এই লেবুগাছটা কে...”
লাল পুরুত হাত তুলে থামিয়ে দেয় ওদেরকে । সে জয়হরিকে বলে “ বাবু এই লেবু গাছটা সমূলে উচ্ছেদ করে  কেটে ফেলাই ভাল।নয়ত আমরা বেঁধে দিয়ে গেলেও  কৌশীকী অমাবস্যাতে ফিরে আসতে পারেআপনি বললে আমরাই কেটে ফেলব এখুনি” । 
জয়হরি সবেতেই সায় জানিয়ে বৈষ্ণবদের রক্তপাত দেখা  নিষেধ বলে তার ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে ঘরে ফিরে যায়। কালো রঙ করা মুরগি আর  মোরগ বড় পৈশাচিক ভাবে জবাই করে তাদের রক্ত  পুরো লেবুগাছে ছিটিয়ে দিয়ে এবার লেবু গাছ নিধন পরব সুরু হল ।
অনিল এতক্ষণ চুপ হয়ে সব দেখছিল বেশ  মুখভার  করেই। লাল পুরুত ওরই রাস্তা ব্যবহার করে শুধু যে ঠকবাজি করে চলেছে তাই নয় একটা নিরীহ, নির্দোষী ফলন্ত লেবুগাছের প্রান যেতে বসেছে । ও আর থাকতে না পেরে উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যায়।    
আমরা সবাই আর সিনিয়র দাদা ওকে ধরে বাগানের  বাইরে নিয়ে গিয়ে দোতালায় নিয়ে যাই ওকে
সিনিয়র দাদার ঘরে  বাগানে  ভুত তাড়ানো নিয়ে  আলোচনা চলছিলো। হঠাৎ নজরে এল যে অনিল আমাদের আড্ডাতে নেই । ওর ঘরে গিয়ে দেখি সেখানেও  নেই, ওর জামা-কাপড় আর সাইড ব্যাগ যা দেওয়ালে ঝোলে  তাও নেই। 
ও যাবার সময় রান্নাঘরে গোবিন্দকে বলে গেছে যে ও ওর দেশের বাড়ি যাচ্ছেএখন ও কয়েক দিন সেখান থেকেই যাওয়া আসা করবে।এই বাড়ীর ডুপ্লিকেট চাবি ও সিনিয়র দাদার বালিসের তলায় রেখে দিয়েছে ।
আমরা  তখন বুঝলাম যে হয়ত নিরীহ লেবু গাছটা কাটা পড়বার ব্যাপারটা ও ভুলতে পারছে না। একটা ফলন্ত গাছ বেচারি শুধু শুধু নিজের জান হারাল তার সুত্রপাত তো ও করে গেছে এইটাই ওর মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে হয়ত দেশের বাড়িতে থেকে এই শোকটা হয়ত ও ভুলতে চাইছে।
তবে পুরো ব্যাপারটা যে শুধু লেবুগাছটা কাটা যাবার জন্যই নয় সেইসাথে   আরও কিছু এতে জড়িয়ে আছে এটা জানলাম আমরা সবাইতবে সেটা জানলাম মধ্য-রাতে।  
আমার বিছানার সামনে  খোলা জানালা আর এই বাড়িতে আসার পর এটা প্রথম রাত যখন মাথার ওপর ফ্যানটা চলছে অবিরত এবং পুরো টপ স্পিডে ।
আমার রুমে ছিল আমার সহপাঠি বন্ধু অরুপ । ও মাঝ রাত অবধি জেগে রিপোর্ট তৈরি করছিল । আমি তখন ঘুমের মধ্যসাগরে তলিয়ে গেছি।
অরুপের জোর  ঠ্যালা খেয়ে আমি চোখ খুলতেই শুনি ফিসফিসিয়ে ও কিছু বলে চলেছে। আমার অবস্থা দেখে ও এবার মৃদু আওয়াজে বলে “ ছাদে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে” ।

No comments:

Post a Comment