বিদেহি প্রেমিকা
#Pradip Kumar Biswas
তৃতীয় পর্ব # ভুতের
গল্প #Bengali ghost story
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/pradip-kumar-biswas-bengali-ghost-story.html
কালীবাড়ির লাল পুরুত আস্থানার সামনে এসে সব দেখে ভয়ে শিউরে উঠলো। এক বার আভুমি গড় করে বলে “ বাবু-সকল খুব বড়
সিদ্ধাই ছাড়া এই রকম চড়া মাপের আস্থানা আর কেউ গড়তে পারে না। এই
সাঙ্ঘাতিক আস্থানার কাটান করে সেটা তুলে
ফেলা বড় গুনিনের কাজ”।
পাড়ার মোড়ের কালীবাড়ীর লালপুরুত বিদায় নিতেই আমাদের একতলা থেকে এবার ললিতাভ্যাম্পের জোর মড়া কান্না ভেসে এলো । উপস্থিত মহিলারা বাড়ির সদর দরজার বাইরে থেকে আহা-উহু ছাড়া আর
কিছু করতে পারলেন না ।
আস্থানা মাড়িয়ে বা পেরিয়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে ললিতাকে সান্ত্বনা দেবেন সে সাহস কার
আছে?
এমন সময় দেখি অনিল খোঁচা মারছে আমার পাঁজরে কিন্তু মুখটা
বিশাল দুখী বানিয়ে রেখেছে। কেউ যতই কষ্ট
দিক তার দুঃখে মনে মনে মজা পাওয়া ঠিক নয়। অনিলের এই ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে
পারলাম না।
এই সময় দেখি ভিড় কাটিয়ে দু’জন সামনে আসবার চেষ্টা করছে ।ওঁদের
মধ্যে এক জন বয়স্ক কিন্তু সম্ভ্রান্ত চেহারার। সুস্বাস্থ্যের অধিকারি বয়স্ক ভদ্রলোক
বেশ লম্বা চেহারার, টকটকে দুধে আলতা গায়ের রঙ, দুধ সাদা ধুতি পাঞ্জাবি, শুভ্রকেশ
ব্যাকব্রাশ করে পেছনে টেনে গোড়া এঁটে পনিটেল
করে বাঁধা। গৌর ডিম্বাকৃতি মুখে সাদা দাড়ি পরিস্কার করে হাল্কা ছেঁটে সংক্ষেপিত
করা ।
এই চেহারাতে মেঘমন্দ্র আওয়াজে যখন জটলা করে থাকা লোকজনকে
বলা হয় “যেতে দিন আমাকে” তখন জনতা আবিষ্ট
হয়ে আপনার থেকেই পথ ছেড়ে দেয়। তবে ওনার সঙ্গী নিতান্তই সাধারন চেহারার এক যুবা ।
বয়স্ক ভদ্রলোক একতলার দরজার কাছে এসে সব দেখে একবার থমকে
দাঁড়ালেন । আস্থানাকে আভুমি নত হয়ে প্রনাম জানিয়ে সঙ্গিকে বললেন “ সদানন্দ, বাড়িতে
কে আছেন একবার ডাক দাও তো তাঁদের”। সদানন্দ বিনত
সুরে বলে “ “জি গুরুজি”।এবারে বোঝা গেল এনারা গুরু চেলা।
যাই হোক চেলাকে আর বাড়ির কাউকে ডাকতে আর হল না । গুরুজির
মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বর শুনে জয়হরিবাবু নিজেই এলেন । লেবু গাছ তলায় আর একটি
আসন পাতা আছে শুনে গুরুজি সেই অকুস্থল ও ঘুরে এলেন।
ততক্ষণে খলনায়িকা
ললিতা ভ্যাম্প বাড়ির ভেতর থেকে এসে গেছেন। সিনেমার ভ্যাম্পরা প্যাঁচে পড়লে যে
সুরে কথা বলেন অবিকল সেই সুরেই গতকালের সকালে লেবু-লঙ্কা মাড়িয়ে ফেলা থেকে এখনকার ঘটনা বিস্তারিত করে
বলার চেষ্টায় দু তিন বার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
তার কান্না থামিয়ে গুরুজি বললেন “আমাকে এটা বুঝতে হবে যে
এই তান্ত্রিক আস্থানা আপনাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে”।
নিজের চেলার দিকে তাকিয়ে বললেন “সদানন্দ, গাড়ি থেকে আমার
ঝোলাটা নিয়ে এসো”।
ইনি তাহলে যে-সে গুরুজি নন, বিশাল উচ্চবিত্ত ভক্ত-মণ্ডল
বেষ্টিত উঁচু শ্রেণীর ঠান্ডি মেসিন লাগান গাড়িওয়ালা ধনী গুরুজি।
সদানন্দ তার গুরুজিকে ঝোলা থেকে রুদ্রাক্ষের মালা গলায় ও
হাতে পরিয়ে দিয়েছে । কপালে সাদা ছাই আর সিন্দুরও মাখিয়ে দিয়েছে।
গুরুজি কমণ্ডলু থেকে জল আস্থানার চার দিকে ছিটিয়ে উপস্থিত জনতা
এবং ঘরের মধ্যে বাড়ির মালিক-দম্পতিকে নিজ নিজ স্থানে শান্ত হয়ে বসে পড়তে বললেন। ওনার
কণ্ঠস্বরে কিছু এমন ছিল যে আদেশ তৎক্ষণাৎ পালিত হল।
সদানন্দ
ততক্ষণে বাগান থেকে অনেক জবাফুল নিয়ে এসেছে। গুরুজি মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে তাদের
ওপর কমণ্ডলু থেকে জল ছিটিয়ে দিতেই সেগুলোর
রঙ লাল থেকে গোলাপি হয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নীল হয়ে গেল । উপস্থিত সবাই এবার
গুরুজিকে সমীহ করতে সুরু করল ।
গুরুজি বললেন “সদানন্দ, সবাইকে একটু আশ্রমের কিছু খেতে
দাও, আমাকেও দাও তো”।
সদানন্দ ঝোলা
থেকে এক গাদা দেশলাই কাঠির মত কাঠি গুরুজির হাতে দিয়েছে । গুরুজি সেই থেকে কিছু
কাঠি নিজের হাতে রেখে বাকি সদানন্দকে দিয়ে বললেন “বাবুভেয়েরা এখানে যারা আছেন
যতজনকে দিতে পার দাও। খান সবাই নির্ভয়ে। আশ্রমের গাছের জিনিস” ।
কেউ হাত পেতে নিল, কেউবা আবার সভয়ে এড়িয়ে গেল। আমরা সবাই
খেয়ে দেখি দারুন সুস্বাদু, বেশ মিষ্টি। গুরুজি ততক্ষণে দরজার ওপাশে বসে থাকা বাড়ির
মালিক-দম্পতিকেও দিলেন । ওনারা খেয়ে থু থু করে ফেলে দিলেন। ললিতা থু থু করতে করতে মুখ
বিকৃত করে বললেন ‘বাবারে হালকুচ তেতো , এর চাইতে করলা অনেক ভালো” ।
গুরুজি এবার নিজেও খেলেন বেশ তারিয়ে তারিয়ে তারপর একটু
গলা চড়িয়ে বললেন “ বাবুভেয়েরা আপনাদের কেমন লাগলো?” একজন বয়স্ক লোক বললেন “বেশ
মিষ্টি। মনে হল যেন যষ্টি মধু খাচ্ছি”
গুরুজি
বললেন “ যথার্থ বলেছেন । আপনাদের
সবাইকে আশ্রমের যষ্টি মধুর কাঠিই তো দিয়েছি।কিন্তু এই বাড়ির ওনারা দুজন দুষ্ট আত্মার
সংক্রমণে নিজেদের স্বাদ অনুভুতি হারিয়ে ফেলেছেন।এঁদেরকে পাপাত্মার কবল থেকে মুক্ত
করবার চেষ্টা করতে পারি অবশ্যই যদি আমার সাহায্য ওনাদের প্রয়োজন হয় ”।
দম্পতি এবার বাড়ির দরজায় লুটিয়ে পড়লেন “ আমাদের রক্ষা
করুন গুরুজি, আমাদের উদ্ধার করুন” ।
গুরুজি ওদের
বলেন “বাড়িতে
পুজোর আসন আছে যদি নিয়ে আসুন আর পাশাপাশি
বসুন দুজনে । আমি যতটা জানি সেই দিয়ে চেষ্টা করবো, বাকিটা বাবা ভূতনাথের ইচ্ছা” ।
গুরুজি সদানন্দের আনা সেই টকটকে লাল রঙের জবাফুল যা লাল
থেকে থেকে রঙ পালটে নীল হয়ে গেছিল সেগুলো আবার আর এক বার দেখে বললেন “হুম। বেশ বড়
রকমের ফাঁদ পেতেছিস দেখছি । এই নিরীহ ফুলগুলোকেও বিষের ছোবল দিয়ে মারলি ।এবার বড় গুনিন আমার কাটানের সামনে দেখি তোর এই নোংরা খেলা কতদুর যায়? আমার সাথে বলুন সবাই,
গলা ছেড়ে বলুন নন্দি ভৃঙ্গী সহ ভূতনাথের
আজ্ঞা। বোল-বোম বাবা ভূতনাথের আজ্ঞা” ।
নারী পুরুষের মিলিত মিঠে-কড়া বোল-বোম, বোল-বো্ম আওয়াজে চারদিক
ভরে উঠলো যেন কুসুমডিঙের আসর বসেছে ।
No comments:
Post a Comment