Friday, September 16, 2016

বিদেহিপ্রেমিকা(নবমও শেষ পর্ব)

                       বিদেহিপ্রেমিকা(নবম ও শেষ পর্ব)
অষ্টম পর্বের লিঙ্ক
 http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_97.html 
   #Pradip Kumar Biswas
     নবম পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
পরদিন সকালে আমাদের রাঁধুনি গোবিন্দ চা এনে আমাদের ডেকে তোলে।  ও আসে সকাল সকাল । গোবিন্দের বাড়ি অনিলের গ্রামেতেই । ভোর বেলায় ও ওখান থেকে বেরিয়ে পরলেও আমাদের এখানে এসে পৌঁছাতে সামান্য বেলাতো হয়েই যায় । গোবিন্দের চা দিয়ে ডাকবার আওয়াজে শুধু আমি আর সিনিয়র দাদা এই দুজনেরই ঘুম ভাঙ্গে । বাকিরা শেষ রাতে ঘুমে তলিয়ে পড়লেও এখন তাদের ঘুম ভাঙ্গে নি।
দাদা আমাকে নিচু আওয়াজে বলে দিলেন আমরা যেন কেউ কালকের রাতের অনিলের ব্যাপারটা নিয়ে গোবিন্দের সামনে কোনও আলোচনা যেন না করি।
রান্নাঘরের পাশেই অনিলের একক ঘর।  গোবিন্দের কাছে আর এক কাপ চা চাইতে গিয়ে তার ওর ঘরের টেবিলের ওপর চোখ পড়ে যায়।  কি আশ্চর্য! কাল আমরা সারা ঘর খুঁজেও অনিলের ট্রান্সরিসিভার খুজে পাই নি । এখন সেটা  ওর টেবিলেই রাখা আছে দেখে আমি সবাইকে ডেকে তুলি
সবাই ঘুম ভেঙ্গে উঠতেই গোবিন্দ সিনিয়র দাদার কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে যাবার ছুটি চায়। গোবিন্দ আর কিসব বলছিল। তাকে থামিয়ে দিয়ে দাদা আমাদের সবাইকে তার রুমে ডেকে পাঠায়। 
আমরা কেউ খাটে বসে কেউ মেঝেতে বসে গোবিন্দের কথা শুনছির জায়গায় গিলছি  বলাটা ঠিক হবে
গোবিন্দ কাল সারারাত নাকি অনিলের বাড়িতেই ছিল ।অনিল জ্বর নিয়েই নাকি কলকাতা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসে। রাত্রে জ্বর বেশি হওয়াতে গোবিন্দ পাশের গ্রাম থেকে ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসে । জ্বরের ঘোরে ও কি সব প্রলাপ বকেছে। তবে পর পর দুটো ইঞ্জেকশান পড়ায় শেষ রাতের দিকে জ্বর একটু কমেছে।আসবার সময় অনিল গোবিন্দকে বলেছে ওর একটা রেডিও আছে সেটা আমাদেরকে বলে ও যেন নিয়ে আসে।
গোবিন্দের কথা শেষ হতেই সিনিয়র দাদা পুরো ব্যাপারটা আর ভাল করে জানবার জন্য বললেন “গোবিন্দ, অনিলের জ্বর শুনে তুমি ঠিক কখন গেছিলে?”
“তখন সন্ধ্যে হবে হবে করছে আমাদের পাশাপাশি ঘর। ওদের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনে আমি আর আমার মা দুজনেই দৌড়ে ওদের বাড়ি এসে দেখি অনিল খুব জ্বরে কাবু হয়ে হাত পা ছুড়ছে। আমার মা আমাকে নিতাই ডাক্তারকে ডেকে আনতে বলে” ।
“সেই সময় ওর কাছে কেউ ছিল?”
“ আমার মা ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। ওকে এই অবস্থায় দেখে ওর মাথার কাছে বসে মাথায় জলপটি দিয়ে সমানে হাওয়া করে গেছে সারারাত”
“ তুমিও ছিলে সেখানে ওর কাছে সারা রাত”
“ হ্যাঁ আমি আর মা পালা করে সারারাত ওর মাথার কাছে ঠায় বসে।অনিলের দাদা- বউদি ও আমাদের সাথে প্রায় পুরোটাই ছিল।   এর মাঝে নিতাই ডাক্তার দু বার এসে ওকে ইনজেকশন দিয়ে গেছে”।
গোবিন্দ আমাদের জন্য জলদি  কিছু খাবার বানাবার জন্য রান্নাঘরে যাচ্ছিল সেই সময় অরুপ ফস করে বলে ওঠে “গোবিন্দ, অনিলের বাড়ি থেকে পেতির জলা কত দূরে?” প্রশ্ন শুনে আমরা সকলে ওকে থামিয়ে দিই। কথার পিঠে কথা বেড়ে অনিলের কালকের রাতের রাদেভু না আবার  ফাঁস হয়ে যায়?
গোবিন্দ ওর কথা শুনে হাত দুটো কপালে ঠেকিয়ে বলে “ সকাল সকাল ওই সব জায়গার নাম নেওয়া উচিত নয়। ওটা তেনাদের জলা, অনিলদের বাড়ি থেকে সামনেই। রাতে-ভিতে ওই পুকুরের জলে আগুন জ্বলেগুনিনরা বলে ওসব জিনিস পেত্নিদের খেলা, দেখলে অমঙ্গল হয়। সে জন্যেই দিন-মানেও ও কেউ ওখানে যায় না।  তা আপনারা কি করে ওর নাম জানলেন?অনিল তাহলে বলেছে আপনাদেরকে”
এমনিতেই কালকের রাতের ছাদের এপিসোড, আমাদেরকে জুন মাসের দার্জিলিঙের কুয়াশা আর মেঘে ঢাকা জ্বলাপাহাড়ের পাহাড়ি রাস্তাটার খাদের ধারে এনে ছেড়ে দিয়েছে । তার ওপর গোবিন্দ এখন যা বলল তাতে আমাদের মনে কুয়াসার মেঘ আর ঘন হয়ে গেল।তবুও আমরা সকলে মিলে একসাথে যৌথ চিন্তা-ভাবনা আর ব্যাপারটা নিয়ে কাটা-ছেঁড়া সুরু করলাম যদি কিছু বোঝা যায়।
অনিল যে কাল রাতে সশরীরে ওর গ্রামের বাড়িতেই ছিল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কালকে রাতে আমাদের এই বাড়ীর ছাদে আমরা সাদা চোখে না দেখলেও পুরুষ কণ্ঠটি যে অনিলের তাতেও কোনও সন্দেহ নেই । কিন্তু একই মানুষ একই সময়ে দুটো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকে কি করে?তবে কি কাল যার কণ্ঠস্বর শুধু শুনেছিলাম সেটা কোনও ভুতের খেল? প্রেত-মায়া? কিন্তু সে এই রকমটা খামোখা করবে কেন?
তারিক, কাল রাতে  যে প্রথমে নিচে ছাদেওর দরজার চাবি আনতে গেছিল সে বলে “অনিলের ট্রান্সরিসিভারটা সে রাত্রে আমরা কেউ সারা ঘর বার বার খুঁজেও পাই নি। আবার পরদিন সকালে সেটা ওর টেবিলেই পাওয়া যায়। সারা রাত তাহলে অনিলের সেটটা কার কাছে ছিল?”
আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে দাদা বললেন “ওই সেটটা চালাবার গোপন কৌশলের চাবিকাঠি অনিল নিজের কাছেই রেখেছেঅন্য কেউ সেটা নিয়ে যাবেই বা কেন? আর যদি নিয়ে যায় ও তবে সেটা আবার ফিরে এল কি করে? দোতলার ঘরের বাইরের দরজার দুটো চাবির একটা অনিলের কাছে আর একটা গোবিন্দের কাছে।গ্রামের বাড়িতে  যাবার সময় অনিল চাবিটা আমার বালিসের তলায় রেখে গেছে”
তাহলে সেই রাত্রে কি অনিল এই দোতলার বাড়িতে আসে নি?ছাদে হুবহু অনিলের কণ্ঠস্বর যে আমরা শুনলাম সেটা কার?একজন শরীরী মানুষ কি অশরীরীর প্রেমে পড়তে পারে?
আফসোস একটাই। আমরা যদি সৌজন্যতা না করে একটু অভদ্র হয়েই যদি কাল রাত্রে সিঁড়ির দরজার তালা ধীরে খুলে একটু পা টিপে এক দু জন একটু এগিয়ে গেলেই চাক্ষুষ দেখা যেত এই রহস্যময় ব্যাপারটা । সেটা না  করায় আমরা সেই ধোঁয়াশার চাদরের মধ্যেই রইলাম ।
একটু পরে গোবিন্দের সাথে অনিলের গ্রামের বাড়িতে ওকে দেখতে গিয়ে আর থাকতে না পেরে আমরা ওকে সোজাসুজি এই ব্যাপারে জিজ্ঞেসই করেছিলাম। আগের মত ও প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে না গিয়ে সোজাসুজি বলে দিয়েছিল “ এ সব তোদের বোঝার বাইরে । এটা আমার নিজের ব্যাপার তোরা চিন্তা করিস না”
আমরা এই নিয়ে আর কেউ কোনও কথা বলিনি আর । কিন্তু সে দিন ওর ঘরে যে জানালার কাছে আমি বসেছিলাম এক  অজানা  মিষ্টি-মধুর গন্ধ আমার নাকে বার বার আসা-যাওয়া  করছিল ।          
এই ঘটনার অনেক বছর পর ইন্দোনেশিয়াতে নিকেল অনুসন্ধানে গিয়ে এক জঙ্গল ক্যাম্পে অনিলের সাথে দেখা হয়ে গেছিল।ওর তাঁবুতে বসে  সারারাত গল্প করেছি দু জনে।
চিরকুমার আপনভোলা এই জগদ্বিখ্যাত ভু-বিজ্ঞানীর সাদাসিধে জীবনধারাতে কোনও প্রসাধনীর গন্ধ কোনোদিনই ছিল না।
 ওর গ্রামের বাড়িতে নাকে আসা সেই অজানা মিষ্টি মধুর গন্ধ ওর সাথে আবার দেখা হবার সেই রাত্রেও বারবার আমি পেয়েছিলামহয়ত সেই  বিদেহি প্রেমিকা ওর চিরসঙ্গিনি হয়ে  গেছে।




   
       
  
   





বিদেহি প্রেমিকা(অষ্টম পর্ব)

                  বিদেহি প্রেমিকা(অষ্টম পর্ব)
সপ্তমপর্বলিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_87.html
      #Pradip Kumar Biswas
     অষ্টম পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
চোর এসেছে মনে করে আমি এবার ফরমায় এলাম। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে দরজার কোনে রাখা  একটা মোটা  লাঠি হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলাম
ততক্ষণে অন্য রুমে ও বাকি সবাই টের পেয়ে বেরিয়ে এসেছে। ছাদে যাবার সিঁড়িতে একটু এগিয়ে দেখি ছাদের দরজা বন্ধ এবং তালা লাগানো বন্ধ দরজার বেশ কাছে এসে আমরা সবাই কিন্তু শুনলাম চাপা গলায় কেউ যেন কাউকে ডাকছে। আমাদের মধ্যে তারিক গেল ছাদের দরজার চাবি আনতে ।
কিন্তু সিনিয়র দাদা আমাদের বারন করলেন ছাদের দরজা খুললেই বিপদ হতে পারে। এমনটা হতে পারে যে ছাদে এসেছে  তার দলের লোকদেরও এখানেই এক এক করে আসার কথা চোর ডাকাতরা তো অ্যাকশনে নামার আগে একবার সবাই এক জায়গায় জড়ো  হয় দাদা বললেন আমাদের এখন শোনা উচিত এই গ্যাং কি করতে চায়? 
ওনার কথা শেষ হয় নি তার আগে নারী কণ্ঠে চাপা কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। প্রথমে মৃদু পরে কিন্তু বেশ  স্পষ্ট । এমন কি তারিক যে ছাদের দরজার চাবি আনতে গেছিল সেও শুনতে পেয়েছে । এই কান্না শুনে আমরা সবাই তো বেশ বিভ্রান্ত হয়ে গেলামতা হলে ব্যাপারটা কি?
তারিক নিচে গিয়ে যা দেখেছে ফিসফিস করে আমাদের বলল। সব শুনে  তো আমরা একই সাথে হতভম্ব আর বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম।
ছাদের চাবি সাধারণতঃ রান্নাঘরে মিট-সেফে থাকেকিন্তু তারিক চাবি সেখানে পায়নি । চাবি ছিল অনিলের বিছানায় । শুধু তাই নয় । দুপুরে অনিলের চলে যাবার খবর পেয়ে আমরা সবাই ওর রুমে গিয়ে দেখেছি যে  ওর বিছানার কাছে ছোট সাইড টেবিলে ওর প্রিয় ট্রান্সরিসিভার সেটটি হেলায় পড়ে আছে।
তারিক  কিন্তু ভাল করে দেখেছে ওই সেটটি অনিলের ঘরে তো নেইই পুরো ঘর খুঁজেও দেখে  নি। তবে কি চোরেরা কোনও ভাবে এটা চুরি করেছে? ওটা অনিল ছাড়া কেউ চালাতে পারবে না। ওদের এটা নিয়ে কোনও লাভ নেই ভেবে ফেলেই যাবে ।
আমরা ছাদের দরজার কাছে খুব সাবধানে কান পেতে রইলাম।পরের মুহূর্তে যা আমাদের কানে এল সেটা যদি তখন যদি মেঘহীন আকাশে বাজ পড়বার আওয়াজ শুনতাম তবে  তাতেও আমরা অনেক কম হতভম্ব হতাম।
নারী কণ্ঠের কান্নার আওয়াজ তখন বেশ স্পষ্ট ।   “কেঁদো না প্লিজ” পুরুষ কণ্ঠের এই আওয়াজ চাপা হলেও আমরা সবাই হলফ করে বলতে পারি এ আওয়াজ অনিল ছাড়া আর কারো নয় যার সাথে আমরা তিন তিনটে বছর একই ক্লাসে, একই হোস্টেলে দিন কাটিয়েছি।
কিন্তু অনিল এখানে কিভাবে এল? ও কি তাহলে শেষ অবধি গ্রামের বাড়ি না গিয়ে  হয়ত ওর গ্রুপ থিয়েটারের রিহার্সালে গেছিল? যে নারী কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে তা কি ওর কোনও সহ অভিনেত্রীর? এই কান্নাটা কি  নাটকের রিহার্সালের কিছু যা ট্রান্সরিসিভারে শোনা যাচ্ছে?  নিছক রিহার্সাল দিতে কেউ নিজের ভাড়াবাড়ির ছাদে এভাবে একজন সহ-অভিনেত্রিকে সাথে নিয়ে পাইপ বেয়ে কেন আসবে? হতে পারে ট্রান্সরিসিভার ছাদে পরিস্কার শোনা যায় সেই জন্য ও কি ছাদে এসেছে? কিন্তু ছাদের দরজা তো চাবি দেওয়া ।
আমাদের সকলের মিলিত ফুস-ফাস থেমে গেল নারীকণ্ঠের কান্না জড়ানো আবেগ ভরা  সুরেলা অথচ চাপা গলার আওয়াজ শুনে। গলার মডুলেশনটা এত ভালো যে চাপাগলায় বললেও একটু দূর থেকেও স্পষ্ট শোনা যায় ।
“আমার একমাত্র আশ্রয় তো শেষ হয়ে গেল? তুমি, এই তুমিইতো রাস্তা দেখিয়ে আনলে ওই ঠগগুলোকে”
অনিল বলে “ শান্তিতে থাকার জন্য এই কাজটা করেছিলাম।তখন বুঝি নি যে এর জন্য তোমাকে আশ্রয় হারাতে হবে ।আমায় ক্ষমা করে দাও তুমি”
এই অবধি শুনে মনে হচ্ছিল এটা হয় নাটকের মহলা কিম্বা ওর কোনও মনের মানবীর সাথে অন্তরঙ্গ আলাপ । আমাদের এভাবে আড়ি পাতা ঠিক হচ্ছে না।
আমরা যাবার জন্য পা বাড়িয়েও থেমে গেলাম তার পরের কথাগুলো শুনে। জানতাম না আমাদের জন্য এই মাঝ রাতে এত বিস্ময় অপেক্ষা করছিল ।
নারীকণ্ঠ বলে “বলে দাও তুমি এখন আমি কোথায় থাকি? জানো তো তুমি, বাজে গন্ধ, বেশি আলো  আর আওয়াজ আমি সহ্য করতে পারি না।  বেশ ছিলাম আমি এই বাড়ীর পেছনের বাগানেবাড়ীর ছায়া দুপুর হলেই ঢেকে ফেলত  পুরো বাগানকে।  লেবুপাতা আর ফুলের গন্ধে আমি বেশ ছিলাম। এর পর  তুমি এলে। হাসি, গান আর  আনন্দে ভরিয়ে দিলে আমাকে।  আমার সেই আগেকার আনন্দের সময় ফিরে এল। ভাবি নি সেই তুমি ই ...” করুন কান্নার মারু বেহাগ এবার দ্রুত তালে বেজে চার দিক ভরিয়ে তুললকিন্তু অনিল তাকে দ্রুত সামাল দিল ।
কিন্তু আমরা সবাই মিলে এটা কি শুনলাম? নারী কণ্ঠটি  কার? আমরা যা  বাক্যালাপ শুনলাম তাতে তো মনে হয় এটা কোনও নাটকের মহলা নয়।
তবে এই নারী কণ্ঠ যার  সে কি  লেবুগাছে আশ্রয় নেওয়া অশরীরী? তাহলে লেবুগাছে কি সত্যি কোনও অশরীরী ছিল?যা শুনছি সকলে তাতে সবারই মনে হচ্ছে অনিলের সাথে তার তো বেশ একটা মিষ্টি মধুর রোমান্টিক সম্পর্ক।  সে যদি অনিলের প্রেমিকা হবে তবে সে ললিতা ভ্যাম্পকে অনিল সমেত আমাদেরকে কষ্ট দেবার কুবুদ্ধি কেন দেবে?
আমার রুমমেট অরুপের চাপা গলাতে অবিশ্বাস আর সন্দেহ ঝরে পড়ে “অনিল আমাদেরকে উল্লু বানিয়েছে মনে হচ্ছে আরে এই মেয়েটা যদি  পেত্নিই হবে তবে তার গলার আওয়াজ তো খোনা খোনা হবেআমরা যা শুনছি সেটা তো সত্যিকার মেয়েদের গলার মত আওয়াজআর তোরা ও সেইরকম। পেত্নীর সাথে অনিলের প্রেমালাপ? কে বিশ্বাস করবে? সবাই শুনে হাসবে আর আমাদেরকে বোকা ভাববে”।
আমাদের সিনিয়র দাদা ইসারা করে চুপ করতে বলে “আমরা এই নিয়ে আলোচনাটা পরেও করতে পারি।এটা ওর কোনও ব্যাক্তিগত ব্যাপার না অন্য কিছু সেটা বোঝার জন্য আগে আলাপটা আর একটু শুনে তো নি”
এবার স্পষ্ট শুনলাম অনিলের কথা। ও বলছে “তুমি আমার সাথে চল। গ্রামের বাইরে আলেয়াজলা নামে একটা  পুরানো পুকুর আছে রাতে  ওই পুকুরে আগুন জ্বলে ওঠে কখন কখন।সেখানে কেউ যায় না বড় একটা পুকুর পাড়ে অনেক সাদা টগর, হাস্নুহানা আর জুঁই ফুলের গাছ আছে। শান্ত সুন্দর পরিবেশ, তোমার খুব ভাল লাগবে। ”
“ আর তুমি, তুমি তো সেখানে থাকবে না। তুমি তো এই বাড়িতে তোমার কাজ  আর তোমার বন্ধুদের সাথে থাকবে।”
“ সারাদিনের কাজের শেষে আমি তোমার কাছেই থাকব।গরমের ছুটির পর আমি যখন খড়গপুরে ফিরে যাব তখন তোমাকে সেখানে নিয়ে যাব”
“ সেখানে আমার ঠাঁই কোথায় হবে? তুমি তো হোস্টেলে থাকো।”      
“হোস্টেলে আমার ঘর থেকে সামান্য দূরে  মহুয়া, শাল, স্বর্ণচাঁপা আর  গন্ধরাজের বনে ঢাকা এক পীরের পুরানো কবরস্থান আছেসেখানে কেউ কখনো যায় না সেখানে তোমার থাকার জন্য একটা সুন্দর জায়গা বেছেছি”।
আমরা জানি না  আর কতক্ষণ ধরে চলেছিল অনিলের এই রাতের রাদেভু। তবে সেটা শরীরী আর অশরীরী প্রেমিক যুগলের বিদেহি প্রেমালাপ না আমাদের অজানা কোনও  টেকনোলজির কারসাজি সে নিয়ে একটা আলো আঁধারি রয়েই গেল ।
তবুও কোথাও যেন আমাদের নিজেদেরকে আড়িপাতা অপরাধী বলে মনে হওয়াতে সবাই ছাদের সিঁড়ি ঘর থেকে নিজেদের রুমে ফিরে আসি।  
নিচে নেমে এসে সবাই আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওর ট্রান্সরিসিভার কোনও রুমেই খুজে পেলাম না।তাহলে ওটা গেল কোথায়? এটা ওর ট্রান্স রিসিভারের খেলা না আর কিছু সেটা ও এই নৈশ রাদেভুর পাট চুকিয়ে নিজের রুমে ঢুকলেই তখন হাতেনাতে ধরা যাবে।
এই সব কিছু শোনার পর আজ রাতে এমনিতেই ঘুম আর আসবেই না। আর আমরা চাইছিলাম অনিলের এই ব্যপারটার একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক।   কেউ যাতে ঘুমিয়ে  না পড়ি সেজন্য অন্ধকার ঘরে একটা রুমের দুটো বিছানায় বসে রইলাম সবাইমাঝে মধ্যে নিজেদের মধ্যে চাপাগলায় অনিলকে নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছিলই।পরদিন কেন্দ্রীয় সরকারি ছুটি থাকাতে আমাদেরও ছুটি ।  সারা রাত জেগে কাটালেও অসুবিধে হবে না।

বিদেহি প্রেমিকা(সপ্তম পর্ব)

                 বিদেহি প্রেমিকা(সপ্তম পর্ব)
ষষ্ঠপর্বেরলিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_5.html
      #Pradip Kumar Biswas
    সপ্তম পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
অর্ধ অচেতন ললিতাভ্যাম্প ওঠে  কি করে? কিন্তু ভৈরবী থামবার নয় । সবাইকে অবাক করে দিয়ে এবার সে ললিতা ভ্যাম্পকে মুড়ো ঝাঁটার একবাড়ি মারে ।
ককিয়ে কেঁদে ওঠে ললিতা ভ্যাম্প “ওরে বাবাগো আমায় আর মেরো না গো।আমি জীবনে কারো কোনও ক্ষতি করব না. আর কারো দুঃখের  কারন হব না”
এই বলতে বলতে উঠে নিজের বাড়ির দিকে টলতে টলতে যেতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে লেবুগাছকে  জড়িয়ে ধরে  গাছতলাতেই পড়ে যায় আর সেই সাথে ওর ধাক্কাতেই হয়ত দুটো পাকা লেবু ওর মাথার কাছে গড়িয়ে পড়ে। এইসব দেখে জয়হরি উতলা হলে লাল পুরুত তাকে আশ্বস্ত করে।
লেবু জোড়া হাতে নিয়ে খল খল করে হেসে ওঠে ভৈরবী । “গেছে এবার হারামজাদি। ভৈরব এবার এই লেবু দুটো এখুনি কেটে দে। ভুতনিটার খেল খতম হয়ে যাক। ”
ভৈরব মাথা নেড়ে বলে “নারে, এই পেতির আস্তানা জড় থেকে শেষ করতে হবেসে ব্যবস্থা করছি। বাবুর যেন আবার কোনও বিপদ না হয়”   
মহিলারা যারা এতক্ষণ বাগানের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ভিড় করে তারা ললিতাকে ধরাধরি করে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।
জয়হরিকে লেবু গাছ তলাতে আনতেই সে এবার ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠে “ এই সব আমার দোষ, আমার দোষ।আমার বউ  কাউকে  শান্তিতে থাকতে দেয় নি। ছেলেটা তো কবে পালাতে বাধ্য হয়েছে বউ নিয়েআর আমি! সব চুপচাপ  দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেখেছি।”
আমরা স্তব্ধ হয়ে শুনি, উৎসুক জনতা যারা  এতক্ষণ ওঝার খেলা  দেখতে ভিড় করেছিল তাদের মধ্যেও এই নিয়ে চাপা গুঞ্জন ওঠে।
আমরা ভাবি জয়হরি এই সব কি বলছে? তাহলে ললিতার স্বভাবটাই এই রকমের? আমরাই শুধু নই এই মহিলা তো ওর নিজের ছেলে-বউকেও ছাড়ে নি । ও তাহলে সত্যিই ভ্যাম্প।
ভৈরবী, তান্ত্রিক আর লাল পুরুত এই তিন ঠগির খেলা মনে মনে খারাপ লাগলেও এবার মনে হল ভালই করেছে।  সবার সামনে ভুতের নামে এই রকম ঝাঁটাপেটা ওর খাওয়া দরকার ছিল।
লাল পুরুত বলে ওঠে “ওসব নিয়ে আর আপনি ভাববেন নাউনি যা করেছেন সব একটা পেতির প্রভাবে ।তাকে আমরা গিন্নি মায়ের শরীর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। এর সাথে আপনার পুরো ঘর এখন আমরা বেঁধে দিয়েছি শুধু সামান্য একটু কাজ বাকি আছে এখন ।”
এবার তাহলে জয়হরিকেও ঠ্যাঙাবে নাকি? দেখি ভৈরবী আর তান্ত্রিক কালো রঙ লাগানো মোরগ বা মোরগ ও মুরগির পুরো দলটাকেই নিয়ে আসছে।
ভৈরবী তার রাতপ্রহরের শেয়াল-ডাকা গলায় উচ্চস্বরে বলে “পেতিটা  লেবুগাছে আর না ফিরতে পেরে এই মোরগগুলোর ওপর ভর করেছে ।  এই বার সবকটা মোরগকে জয়তারা বলে  বলিদান করব তাতে পেতি আর পালাবার পথ পাবে না । এই লেবুগাছটা কে...”
লাল পুরুত হাত তুলে থামিয়ে দেয় ওদেরকে । সে জয়হরিকে বলে “ বাবু এই লেবু গাছটা সমূলে উচ্ছেদ করে  কেটে ফেলাই ভাল।নয়ত আমরা বেঁধে দিয়ে গেলেও  কৌশীকী অমাবস্যাতে ফিরে আসতে পারেআপনি বললে আমরাই কেটে ফেলব এখুনি” । 
জয়হরি সবেতেই সায় জানিয়ে বৈষ্ণবদের রক্তপাত দেখা  নিষেধ বলে তার ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে ঘরে ফিরে যায়। কালো রঙ করা মুরগি আর  মোরগ বড় পৈশাচিক ভাবে জবাই করে তাদের রক্ত  পুরো লেবুগাছে ছিটিয়ে দিয়ে এবার লেবু গাছ নিধন পরব সুরু হল ।
অনিল এতক্ষণ চুপ হয়ে সব দেখছিল বেশ  মুখভার  করেই। লাল পুরুত ওরই রাস্তা ব্যবহার করে শুধু যে ঠকবাজি করে চলেছে তাই নয় একটা নিরীহ, নির্দোষী ফলন্ত লেবুগাছের প্রান যেতে বসেছে । ও আর থাকতে না পেরে উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যায়।    
আমরা সবাই আর সিনিয়র দাদা ওকে ধরে বাগানের  বাইরে নিয়ে গিয়ে দোতালায় নিয়ে যাই ওকে
সিনিয়র দাদার ঘরে  বাগানে  ভুত তাড়ানো নিয়ে  আলোচনা চলছিলো। হঠাৎ নজরে এল যে অনিল আমাদের আড্ডাতে নেই । ওর ঘরে গিয়ে দেখি সেখানেও  নেই, ওর জামা-কাপড় আর সাইড ব্যাগ যা দেওয়ালে ঝোলে  তাও নেই। 
ও যাবার সময় রান্নাঘরে গোবিন্দকে বলে গেছে যে ও ওর দেশের বাড়ি যাচ্ছেএখন ও কয়েক দিন সেখান থেকেই যাওয়া আসা করবে।এই বাড়ীর ডুপ্লিকেট চাবি ও সিনিয়র দাদার বালিসের তলায় রেখে দিয়েছে ।
আমরা  তখন বুঝলাম যে হয়ত নিরীহ লেবু গাছটা কাটা পড়বার ব্যাপারটা ও ভুলতে পারছে না। একটা ফলন্ত গাছ বেচারি শুধু শুধু নিজের জান হারাল তার সুত্রপাত তো ও করে গেছে এইটাই ওর মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে হয়ত দেশের বাড়িতে থেকে এই শোকটা হয়ত ও ভুলতে চাইছে।
তবে পুরো ব্যাপারটা যে শুধু লেবুগাছটা কাটা যাবার জন্যই নয় সেইসাথে   আরও কিছু এতে জড়িয়ে আছে এটা জানলাম আমরা সবাইতবে সেটা জানলাম মধ্য-রাতে।  
আমার বিছানার সামনে  খোলা জানালা আর এই বাড়িতে আসার পর এটা প্রথম রাত যখন মাথার ওপর ফ্যানটা চলছে অবিরত এবং পুরো টপ স্পিডে ।
আমার রুমে ছিল আমার সহপাঠি বন্ধু অরুপ । ও মাঝ রাত অবধি জেগে রিপোর্ট তৈরি করছিল । আমি তখন ঘুমের মধ্যসাগরে তলিয়ে গেছি।
অরুপের জোর  ঠ্যালা খেয়ে আমি চোখ খুলতেই শুনি ফিসফিসিয়ে ও কিছু বলে চলেছে। আমার অবস্থা দেখে ও এবার মৃদু আওয়াজে বলে “ ছাদে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে” ।

বিদেহি প্রেমিকা(ষষ্ঠ পর্ব)

                বিদেহি প্রেমিকা(ষষ্ঠ পর্ব)
  পঞ্চমপর্বের লিঙ্ক  http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_53.html 
        #Pradip Kumar Biswas
    ষষ্ঠ পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
পা ভেঙ্গেছে কি না এক্স-রে না হলে বলা যাচ্ছে না তবে তাঁর পায়ে বিশাল ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ফিরে এসে দেখি ততক্ষণে তান্ত্রিকের ফর্দ হয়ে গেছে
ধুতি-শাড়ি আধ ডজন করে আর একটি কালো পাঁঠা অভাবে এক ডজন কালো মোরগ চাই । এ ছাড়া অনান্য আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছু আছেই ।  
জয়হরির পায়ের ব্যান্ডেজের সাইজ এবং ওনার অবস্থা দেখে ললিতা ভ্যাম্প কাঁদতে কাঁদতে সেই দিন দুপুরেই কাটান পুজো করিয়ে নিতে রাজি হয়ে যান
কালীবাড়ির লাল-পুরুত আর তান্ত্রিক সুযোগ বুঝে গিন্নির কাছে হাজার খানেকেরও বেশি টাকা নিয়ে  ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুজোর সব জিনিষ নিয়ে  এসে হাজির।
এর মধ্যে আমাদের কাছে নিজের পরিবারের সকলের নামে দিব্যি গেলে অনিল বলেছে যে আজকের ব্যাপারে সে কোনও ভাবেই জড়িত নয়। আমরা কালীবাড়ির লালপুরুত আর তান্ত্রিকের সাজানো ঠক-বাজির ব্যাপারটা বুঝেও নিরুপায় ।
সিনিয়র দাদার  ঘরে মিটিংএর পরে স্থির হল এব্যাপারে  নীরব থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ
তবে অন্যায় ভাবে ললিতা ভ্যাম্প  এক দিন আগেও আমাদের যেভাবে একটানা কষ্ট দিয়েছিল সেই সব ব্যাথাগুলো ও প্রচ্ছন্ন ভাবে এটা  একটা ঠকবাজি জেনে ও বরং কাজে সমর্থন যোগাল
প্রমাদ গুনলাম আমাদের যখন উনি  তান্ত্রিকের কাটান অনুষ্ঠানে একতলায় আমাদের ডেকে পাঠালেন।অনুরোধে    ঢেঁকি গেলার মত করে আমাদের সবাইকে যেতেই হল। জীবনে কখনো এই সব দেখি নি। তবে যা দেখলাম তা একটা মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা 
পুজোর  আয়োজন হয়েছে পেছনের বাগানে, লেবুগাছতলার কাছে। পুজোর জোগাড় তেমন  বেশি কিছু না। মনে তো হল কালী মন্দিরেরই প্রসাদি ফলমূল আর নৈবেদ্যর চাল লাল পুরুত নিয়ে এসেছে।এক আধটা  ধুতি-শাড়িতে আর কিছু গোটা ফলে তো বাসী সিন্দুর তখনো লেগে আছে।
কালোপাঁঠার জায়গায় কালো মোরগ এক ডজন  এসেছে । সেগুলো বাগানের উত্তর প্রান্তে  বাঁধা আছে। আমাদের রাঁধুনি গোবিন্দ সেগুলো দেখে আমাদের ফিসফিসিয়ে বলে যে সব কটাই মোরগ নয়, কিছু মুরগিও আছে।  মুরগিগুলোর মধ্যে  বেশ কিছু   নাকি সদ্য কালো কলপ দিয়ে রঙ করা । এক-দুটোর তো   পায়ের কাছে কালো রঙ পুরো লাগে নি, অরিজিনাল সাদা দেখা যাচ্ছে।
ভালো! মুরগি করবার অনুষ্ঠানে কালো কলপ লাগানো মুরগি তো আসবেই।
লাল পুরুত আর তান্ত্রিক দুজনে লাল কাপড় পরে সদ্য কারনবারি পান করেই কাটান পুজোতে বসেছে। তান্ত্রিক একটি তালপাতার পুঁথি এনেছে আর তার পাশে এক জন ভৈরবীও বসে আছে
পুঁথি দেখে তান্ত্রিক জড়ানো গলায় কিছু বলছে আর লাল পুরুত সে গুলোই আবার বলছে ।  অবশ্য কালকের গুরুজির মতই  এক এক বার  তিনজনেই  মিলিত হুঙ্কার ছাড়ছে  “ওঁ জয় বাবা ভূতনাথের আজ্ঞাশ্মশানে আছিস কে?”ভৈরবীর গলার সুর অনেকটা মাঝ রাতে শেয়াল ডাকার মত ।
এর পর পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে আমাদের একজনের  কাঁধে ভর দিয়ে জয়হরি বসলেন টুলে আর তার পাশে কম্বলের নকলি বাঘছাল প্রিন্ট আসনে আসন-পিঁড়ি করে বসলেন ললিতা ভ্যাম্প
চার চারটে বিশাল ধুনুচির ধোঁয়াতে দম বন্ধ হয়ে আসেধোঁয়াতে ধুনোর সাথে আরও অন্য কিছু নিশ্চয় মেশানো ছিল।
নেহাত খোলা বাগান আর ব্যাপারটা কি হচ্ছে সেইটা জানবার বা দেখবার কৌতূহল।তাই আমরা ধোঁয়া সহ্য করে একটু সরে গেলাম বটে  কিন্তু বাগানের এক কোনেই রইলাম।
এইবার দেখি এরাও কালকের গুরুজির মত বিড়-বিড় করে কি কি সব মন্ত্র পড়ছে আর সরষেদানার মত বস্তু জয়হরি আর ললিতা দু’জনকেই ছুড়ে ছুড়ে মারছে।
ভৈরবী একটা চামর বার করে মন্ত্র পড়ে  আর দুজনের গায়ে তা বুলিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার এই রকম করার পর ভৈরবী এসে তান্ত্রিককে কিছু বলে।
লালপুরুত আর তান্ত্রিকের কাঁধে ভর দিয়ে জয়হরি একটু দূরে বাগানের এক কোনে বসে। এবার ভৈরবী মাঝরাতের শেয়ালডাকা গলায় হিং ক্রিং, হিং ক্রিং, জয় মা তারার আজ্ঞা এই সব কিছু বলে কয়েকবার চিৎকার করে আকাশের দিকে মুখ উচু করে শেয়ালের মত করে ডাকবার পর   ধুনুচিতে কতোগুলো নীল সাদা গুলি ছুড়ে মারল আর জয় মা তারা,জয় মা তারা বলে এবার প্রায় দৌড়ে এগিয়ে গেল ললিতার দিকে ।
ললিতাভ্যাম্পের মাথায় অন্যকে  কষ্ট দেবার শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল করতে থাকলেও আসলে বেশ নার্ভাস টাইপের । কালকে গুরুজির জাদুর খেলার শেষ দিকে তো অজ্ঞানই হয়ে গেছিল ।
এখন ভীষণ দর্শনা  ভৈরবীকে হাতে জ্বলন্ত ধোঁয়া ওঠা ধুনুচি নিয়ে তার দিকে তেড়ে আসতে দেখে ভয়ে উঠে পালাতে যাচ্ছিলকিন্তু ভৈরবী তার পথ আগলে দাঁড়ালো“পালিয়ে তুই যাবি কথায়? আজ তো তোর কপালে অনেক দুঃখু আছে। চল বসবি চল”।
ললিতা কাঁদো কাঁদ স্বরে চিঁ চিঁ করে বলে“ না, না আমি আর বসব না”  ততক্ষণে লালপুরুত এগিয়ে এসেছে একটা  মুড়ো ঝাঁটা নিয়ে
বেগতিক দেখে ললিতা ভ্যাম্প এবার বসে পড়তেই তার কাছে ধুনুচি নিয়ে এসে ভৈরবী বলে “ বল তুই থাকিস কোথা? এই ভালমানুষের বউটাকে  কেন ভর করেছিস”
নার্ভাস ললিতাভ্যাম্প তখন নিজের বাড়ি দেখাতে গিয়ে লেবু গাছটাকে দেখিয়ে দেয় ।
ভৈরবী এবার শেয়াল ডাকা গলায় আওয়াজ চড়িয়ে বলে“ও ভৈরব দেখলে তো, পেতিটার ডেরা অই লেবুগাছটা আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম।  বাঁধো ওটাকে অই খানে আর আমি দেকছি বাকীটা।”
ভৈরবী এবার ললিতা ভ্যাম্পের কাছে এসে বলে “কিরে যাবি একে ছেড়ে না অন্য ডোজ খাবি?”
“ না, না আমায় আর কিছু করো না। আমি এখনই যেতে পারব না। উঠতে পারছি না” ।
“যাবি না তাহলে, এই  তোর শেষ কথা? এখনো বলছি উঠে দাঁড়িয়ে চলে যা । আমায় দেখা তুই গেছিস বলে
             

বিদেহি প্রেমিকা(পঞ্চম পর্ব)

                  বিদেহি প্রেমিকা
      #Pradip Kumar Biswas
চতুর্থ পর্বের লিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_39.html
    পঞ্চম পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
আমাদের একটু সন্দেহ কিন্তু গোড়া থেকেই হচ্ছিল। উচ্চবিত্ত সমাজের এক গুরুজি এতটাই মহান যে শুনেই চলে এলেন? আর উনি তো এ-সি গাড়িতে যাচ্ছিলেন, জানলেন কি করে?  লোক-মুখে তো শোনেননি । তবে  যোগ-বলে কি না হয় তাই হবেও বা। দোকানে চা খেতে খেতে দুই বন্ধু এই সব আলোচনা করছিলাম।   
রিসার্চ স্কলার এক সিনিয়র দাদা আমাদের টিমে  থাকতেন যিনি নিজের কাজের সাথে সাথে আমাদেরও কোনও অসুবিধে হলে দেখিয়ে দিতেন । তিনি আমাদের সাথেই থাকতেন একটা বড় ঘরে আরও দুই জনের সাথে 
ফিরে এসে দেখি তাঁর ঘরে আড্ডা জমেছেআমরা দুই বন্ধু একটু আগে চায়ের দোকানে যা আলোচনা করছিলাম সেই নিয়েই জোর আলোচনা চলছে এবং আসরের মধ্যমনি নিঃসন্দেহে অনিল । পুরো রহস্যের চাবি-কাঠি ছিল ওর হাতে যা ও  এখন একটু একটু করে খুলছে ।
লেবু লঙ্কা মাড়িয়ে ফেলবার ব্যাপারটা দেখে অনিল বুঝে যায়  বাড়ীওয়ালি ললিতাভ্যাম্পকে ঠিক রাস্তায় আনবার জন্য  লেবু লঙ্কা চটকানোর চাইতেও একটা বড় মাপের ভুতের ভয় দেখানোর খেলার  মত কিছু করতে হবে।
সেই রবিবারে আমাদের কষ্ট দেখে ও সোজা যায় ওর ডাক্তার দিদির কাছে যার সুপারিশে আমদের ভাড়াটে হিসাবে রাখতে রাজি হন বাড়ীওয়ালা দু’মাসের অগ্রিম ভাড়ার চুক্তিতে ।সব শুনে ওর দিদি যে এই বাড়িওয়ালা পরিবারটিকে নানাভাবে চিকিৎসায় সাহায্য করেছে রেগে অগ্নিশর্মা ।
প্রেতাত্মার ভয় দেখাবার  প্ল্যানটা  ওর  ডাক্তারি-পড়ুয়া দিদিকে বলতেই উনি ওকে এক জোড়া নরমুণ্ড আর হাড়গোড় দিয়ে সাহায্য করতে রাজি হন।
অনিলের সাথে অনেক নাটক গ্রুপের ওঠা-বসা ছিলওর পরিচিত একটি নাটক গোষ্ঠী সব শুনে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেতাঁদের একটি নাটকে এইরকম একটি দৃশ্য আছে। ভালই হবে, ড্রেস রিহারসাল হয়ে যাবে।
দুপুরেই নাটক-গোষ্ঠীর লোকজন এই বাড়ির একতলাতে  দুটি আস্থানা পেতে দিয়ে যায় । গুরুজি একজন সখের অভিনেতা ও পেশাদার  যাদুকর।সদানন্দও অভিনেতা এবং ওনার জাদুর খেলার সহকারি।
সেই সময় আমরা সবাই যা দেখেছি তা আসলে যাদু-নাটকসবাইকে উনি যষ্টিমধু দিলেও হাতসাফাই এর খেলায় জয়হরি- দম্পতিকে চিরতার কাঠি দিয়েছিলেন।এমন কি পেছনের বাগানে ওরে বাবাগো বলে  ভুতের পালিয়ে যাবার চিৎকারটা হরবোলা সদানন্দের খেল।
বাথরুম ও রান্নাঘরে তোড়ে জল পড়ছে। আলো  হলুদ হয়ে  নিভে যাচ্ছে না । জাদুকরের জাদু কতদিন থাকে সেইটাই দেখবার । যাই হোক আমরা সকলেই অনিলের প্রচেষ্টা এবং বুদ্ধির প্রশংসা করলাম প্রেমে ও রণে জয়লাভের জন্য সবকিছু করা যেতেই পারে ।
এক এক করে বাথরুমে তোফা স্নান সেরে ও তাড়াতাড়ি    খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম কিন্তু  জোর হাঁক ডাকে রবিবারেও সকাল সকাল উঠে পড়তে বাধ্য হলাম ।
লাল পুরোহিত এক জন তান্ত্রিককে ধরে নিয়ে এসেছে।সেই তান্ত্রিক নানারকম ভয় দেখাচ্ছে।
কালকের কাটানটা নাকি  হোমিওপ্যাথিক ডোজ। ওতে তেমন কোনও কাজ হয় নি। তান্ত্রিক বলছে তেনারা নাকি এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সবের ঠিকঠাক কাটান না করালে বিপদ অনিবার্য ।
এই সময় বাথরুমে বাড়ীওয়ালা জয়হরি পা হড়কে পড়ে গিয়ে আর্তনাদ করতে থাকেন । আমরা কয়েকজন তাঁকে নিয়ে দৌড়ালাম ডাক্তারখানায় । 

বিদেহি প্রেমিকা ( চতুর্থ পর্ব )

                  বিদেহি প্রেমিকা
      #Pradip Kumar Biswas
    চতুর্থ পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
(তৃতীয়পর্বেরলিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_13.html)
গুরুজি চোখ বন্ধ করে  হাতের মুঠো বন্ধ করে কি সব মন্ত্র পাঠ করলেন। অবোধ্য মন্ত্র কিন্তু সুললিত মেঘমন্দ্র আওয়াজে আমরা সবাই যেন সত্যি সত্য মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম।
গুরুজি এবার হিং ক্রিং জাতীয় কিছু বলেন আর একটা বড় থলে থেকে লাল নীল হলুদ রঙের কিছু শস্যদানা মতো জিনিষ এক বার নর-করোটির দিকে ছুড়ে মারেন আবার পরক্ষণেই সেই গুলো বাড়ীওয়ালা দম্পতির দিকে ছুড়ে মারেন।
কিছুক্ষণ এইরকম করার পর কিছু সাদা রঙের গুলি  মারলেন নর করোটিতে । লাল রঙের তেলে সবুজ সলতে লাগান দীপগুলো নিভে লালসবুজ ধোঁয়া বেরতে লাগলো। এবার নর করোটি থেকেও সাদা ধোঁয়া উঠতে সুরু করল। জনতা এই সব দেখবার জন্য ঠেলাঠেলি করতে লাগলো ।
গুরুজি বলেন “ অশুভ আত্মারা আস্থানা থেকে যেতে বাধা পেলে  তারা যাদের আঘাত করবেন ক্ষতি তাঁদেরই হবে। আপনারা ঠিক করে নিন কি বেছে নেবেন?”
গুরুদেবের জলদ গম্ভীর কণ্ঠের নিষেধাজ্ঞা  শুনে জনতা শান্ত হল, ঠেলাঠেলি বন্ধ হল 
এবার দেখি মানকচু পাতাটা থেকে ধোঁয়া উঠছে আর সেই ধোঁয়া একটু ছড়াতেই গুরুজি  কি সব মন্ত্র পাঠ করেন আর সদানন্দের এগিয়ে দেওয়া একটা পুঁটলি থেকে সরষে দানা  খুলি কঙ্কাল আর হাড়গুলোর ওপর  ছুড়ে মারেনএকটু পরে মানকচু পাতার জায়গায় জায়গায় আগুন জ্বলে উঠে নিভে গেল ।
এই সব দেখে ললিতাভ্যাম্প  ভয়ে অ্যাঁ অ্যাঁ চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। গুরুজি তার কমণ্ডলু থেকে ওনার কপালে জল ছিটিয়ে দিয়ে পাসে বসা জয়হরিকে একটি ছোট হোমিওপ্যাথি শিশি  দিয়ে বলেন “দশ ফোঁটা খাইয়ে দিন । এখুনি জ্ঞান  ফিরে আসবে”
গুরুজি এই অবসরে উঠে চললেন বাগানের দিকে । অবাক কাণ্ড, বাগানের আস্থানাতেও দীপ নিভে গেছে কিন্তু একটা ধোঁয়াটে অন্ধকার চারদিক ছেয়ে রয়েছে ।
“এবার তোর খেলা শেষ রে গুনিন যা এবার পালিয়ে যা নয়ত এমন সাজা দেব, দেখবি তার নমুনা?”গুরুজি এবার  রান্নার হলুদগুড়ো মতো কিছু পাউডার নর-করোটির আস্থানায় ছুড়তেই এক বিকট কণ্ঠে কে যেন খুব জোরে আর্ত চিৎকার করল “ ওরে বাবাগো জ্বলে গেলাম রে, ওরে এবার ছেড়ে দে রে” ।
“ ঠিক আছে যা তুই। তবে আর কোনওদিন আসবি না। যা যেখানে ছিলি”
চিল যেমন ছোঁ মেরে মাছ উঠিয়ে নেয় অনেকটা সেই কায়দাতেই গুরুজি বাগানের লেবুতলায় পাতা আস্থানা হাতে দ্রুত  তুলে নিলেন।
সদানন্দ ক্রমাগত চেচিয়ে যাচ্ছে  “গুরুজির হাতে আস্থানা আছে। যে তাঁকে ছোঁবে তাঁর অমঙ্গল হতে পারে”
এই কথায় কাজ হল । গুরুজির সামনের ভিড় পাতলা হয়ে গেল। উনি এবার একতলার সদর দরজায় এলেনসেখান থেকে আস্থানা তুলে ফেলার আগে বাড়ির মালকিন দম্পতি জয়হরি ও ললিতাভ্যাম্প তাঁকে সাষ্টাঙ্গ প্রনাম করতে গেলে সদানন্দ নিষেধ করলে।
ও বলে “ আপনারা বরং শুনে নিন গুরুজির কথা। উনি যা বলবেন সেইটা বরং পালন করবার চেষ্টা করুন”
গুরুজি বললেন “ আপনার কাছে আশ্রিতজন, সে পশু- পাখি বা কাজের লোক এইরকম যাইই হোক না কেন কখনো তাঁদের কষ্ট দেবেন না। বরং তাঁদের কষ্ট লাঘব করবার চেষ্টা করবেন এছাড়া কখনো কারো দুঃখের বা কষ্টের কারণ হবেন না। আপনাদের ঘর পুরো বেঁধে দিয়ে গেলাম । কিন্তু যা বললাম তা যদি পালন না করেন তবে অশুভ আত্মা আবার ফিরে আসবে শতগুন শক্তিশালী হয়ে । কি করবেন তা নিজেরা ঠিক করে নিনআস্থানা বিসর্জন দিয়ে আসি গঙ্গা তীরে ”
জয়হরি- ললিতা দম্পতি তাঁকে প্রনামি দিতে গেলে সদানন্দ হাঁ-হাঁ করে এগিয়ে এলো । “গুরুজি যা করেন স্বেচ্ছায় করেন । কারো কাছে  কোনপ্রকার টাকাপয়সা বা কোনও কিছুই  স্বীকার করেন না । উনি হিমালয়ে থাকেন এক ভক্তের ডাকে এসেছিলেন, আজ রাতেই ফিরে যাবেন এখন এক জোড়া আস্থানা নিয়ে উনি বিভোর হয়ে ওনার গুরুকে স্মরন করছেন । কেউ ওনাকে বিরক্ত করবেন না”।
গুরুজি আর সদানন্দ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নিজদের দুধ সাদা  এম্বাসডরে গঙ্গার ঘাটের রাস্তার দিকে কর্পূরের মত উবে  গেলেন ।
গুরুজির আদেশ ললিতা বাড়িওয়ালী অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। সেই থেকে শুধু আমরা কেন আমাদের পরেও কোনও ভাড়াটে জল আলো নিয়ে কোনও পরিকল্পিত অসুবিধেতে পড়েন নি । কিন্তু এই গল্পের নটে গাছটি কিন্তু এখানেই মুড়োয় নি ।
আমি আর আমার এক সহপাঠী বন্ধু এই সব কাণ্ড-কারখানা দেখার পর পাড়ার দোকানে একটু চা জলখাবার খেয়ে দোতলায় ফিরে সেইটাই দেখলাম।

বিদেহি প্রেমিকা- তৃতীয় পর্ব

                                     বিদেহি প্রেমিকা
      #Pradip Kumar Biswas
    তৃতীয় পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story 
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/pradip-kumar-biswas-bengali-ghost-story.html
কালীবাড়ির লাল পুরুত আস্থানার  সামনে এসে সব দেখে ভয়ে শিউরে উঠলো।  এক বার আভুমি গড় করে বলে “ বাবু-সকল খুব বড় সিদ্ধাই ছাড়া এই রকম চড়া মাপের আস্থানা আর  কেউ গড়তে পারে নাএই সাঙ্ঘাতিক আস্থানার কাটান  করে সেটা তুলে ফেলা বড় গুনিনের কাজ”
পাড়ার মোড়ের কালীবাড়ীর  লালপুরুত বিদায় নিতেই আমাদের একতলা থেকে এবার ললিতাভ্যাম্পের  জোর মড়া কান্না  ভেসে এলো । উপস্থিত মহিলারা  বাড়ির সদর দরজার বাইরে থেকে আহা-উহু ছাড়া আর কিছু করতে পারলেন না আস্থানা মাড়িয়ে বা পেরিয়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে ললিতাকে সান্ত্বনা দেবেন সে সাহস কার আছে?
এমন সময় দেখি অনিল খোঁচা মারছে আমার পাঁজরে কিন্তু মুখটা  বিশাল দুখী বানিয়ে রেখেছে। কেউ যতই কষ্ট দিক তার দুঃখে মনে মনে মজা পাওয়া ঠিক নয়। অনিলের এই ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারলাম না।
এই সময় দেখি ভিড় কাটিয়ে দু’জন সামনে আসবার চেষ্টা করছে ।ওঁদের মধ্যে এক জন বয়স্ক কিন্তু সম্ভ্রান্ত চেহারার। সুস্বাস্থ্যের অধিকারি বয়স্ক ভদ্রলোক বেশ লম্বা চেহারার, টকটকে দুধে আলতা গায়ের রঙ, দুধ সাদা ধুতি পাঞ্জাবি, শুভ্রকেশ ব্যাকব্রাশ করে পেছনে টেনে গোড়া এঁটে  পনিটেল করে বাঁধা। গৌর  ডিম্বাকৃতি মুখে  সাদা দাড়ি পরিস্কার করে হাল্কা ছেঁটে সংক্ষেপিত করা ।
এই চেহারাতে মেঘমন্দ্র আওয়াজে যখন জটলা করে থাকা লোকজনকে বলা হয় “যেতে দিন আমাকে” তখন  জনতা আবিষ্ট হয়ে  আপনার থেকেই  পথ ছেড়ে দেয় তবে ওনার সঙ্গী নিতান্তই সাধারন চেহারার এক যুবা ।
বয়স্ক ভদ্রলোক একতলার দরজার কাছে এসে সব দেখে একবার থমকে দাঁড়ালেন । আস্থানাকে আভুমি নত হয়ে প্রনাম জানিয়ে সঙ্গিকে বললেন “ সদানন্দ, বাড়িতে কে আছেন একবার ডাক দাও তো তাঁদের”। সদানন্দ বিনত  সুরে বলে “ “জি গুরুজি”এবারে বোঝা গেল এনারা গুরু চেলা।
যাই হোক চেলাকে আর বাড়ির কাউকে ডাকতে আর হল না । গুরুজির মেঘমন্দ্র  কণ্ঠস্বর শুনে  জয়হরিবাবু নিজেই এলেন । লেবু গাছ তলায় আর একটি আসন পাতা আছে শুনে গুরুজি সেই অকুস্থল ও ঘুরে এলেন।
ততক্ষণে  খলনায়িকা ললিতা ভ্যাম্প বাড়ির ভেতর থেকে এসে গেছেন সিনেমার ভ্যাম্পরা প্যাঁচে পড়লে যে সুরে কথা বলেন অবিকল সেই সুরেই গতকালের সকালে লেবু-লঙ্কা  মাড়িয়ে ফেলা থেকে এখনকার ঘটনা বিস্তারিত করে বলার চেষ্টায় দু তিন বার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন
তার কান্না থামিয়ে গুরুজি বললেন “আমাকে এটা বুঝতে হবে যে এই তান্ত্রিক আস্থানা আপনাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে”।
নিজের চেলার দিকে তাকিয়ে বললেন “সদানন্দ, গাড়ি থেকে আমার ঝোলাটা নিয়ে এসো”।
ইনি তাহলে যে-সে গুরুজি নন, বিশাল উচ্চবিত্ত ভক্ত-মণ্ডল বেষ্টিত উঁচু শ্রেণীর ঠান্ডি মেসিন লাগান গাড়িওয়ালা  ধনী  গুরুজি।  
সদানন্দ তার গুরুজিকে ঝোলা থেকে রুদ্রাক্ষের মালা গলায় ও হাতে পরিয়ে দিয়েছে । কপালে সাদা ছাই আর সিন্দুরও মাখিয়ে দিয়েছে।
গুরুজি কমণ্ডলু  থেকে জল আস্থানার চার দিকে ছিটিয়ে উপস্থিত জনতা এবং ঘরের মধ্যে বাড়ির মালিক-দম্পতিকে নিজ নিজ স্থানে শান্ত হয়ে বসে পড়তে বললেন। ওনার কণ্ঠস্বরে কিছু এমন ছিল যে আদেশ তৎক্ষণাৎ পালিত হল
সদানন্দ ততক্ষণে বাগান থেকে অনেক জবাফুল নিয়ে এসেছে। গুরুজি মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে তাদের ওপর কমণ্ডলু থেকে জল ছিটিয়ে দিতেই  সেগুলোর রঙ লাল থেকে গোলাপি হয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নীল হয়ে গেল । উপস্থিত সবাই এবার গুরুজিকে সমীহ করতে সুরু করল ।
গুরুজি বললেন “সদানন্দ, সবাইকে একটু আশ্রমের কিছু খেতে দাও, আমাকেও দাও তো”।
সদানন্দ  ঝোলা থেকে এক গাদা দেশলাই কাঠির মত কাঠি গুরুজির হাতে দিয়েছে । গুরুজি সেই থেকে কিছু কাঠি নিজের হাতে রেখে বাকি সদানন্দকে দিয়ে বললেন “বাবুভেয়েরা এখানে যারা আছেন যতজনকে দিতে পার দাওখান সবাই নির্ভয়ে। আশ্রমের গাছের জিনিস”
কেউ হাত পেতে নিল, কেউবা আবার সভয়ে এড়িয়ে গেলআমরা সবাই খেয়ে দেখি দারুন সুস্বাদু, বেশ মিষ্টি। গুরুজি ততক্ষণে দরজার ওপাশে বসে থাকা বাড়ির মালিক-দম্পতিকেও দিলেন । ওনারা খেয়ে থু থু করে ফেলে দিলেন। ললিতা থু থু করতে করতে মুখ বিকৃত করে বললেন ‘বাবারে হালকুচ তেতো , এর চাইতে করলা অনেক ভালো” ।
গুরুজি এবার নিজেও খেলেন বেশ তারিয়ে তারিয়ে তারপর একটু গলা চড়িয়ে বললেন “ বাবুভেয়েরা আপনাদের কেমন লাগলো?” একজন বয়স্ক লোক বললেন “বেশ মিষ্টি। মনে হল যেন যষ্টি মধু খাচ্ছি” 
গুরুজি বললেন “ যথার্থ বলেছেনআপনাদের সবাইকে আশ্রমের যষ্টি মধুর কাঠিই তো দিয়েছি।কিন্তু এই বাড়ির ওনারা দুজন দুষ্ট আত্মার সংক্রমণে নিজেদের স্বাদ অনুভুতি হারিয়ে ফেলেছেন।এঁদেরকে পাপাত্মার কবল থেকে মুক্ত করবার চেষ্টা করতে পারি অবশ্যই যদি আমার সাহায্য ওনাদের প্রয়োজন হয় ”
দম্পতি এবার বাড়ির দরজায় লুটিয়ে পড়লেন “ আমাদের রক্ষা করুন গুরুজি, আমাদের উদ্ধার করুন” ।
গুরুজি  ওদের বলেন বাড়িতে পুজোর আসন আছে যদি  নিয়ে আসুন আর পাশাপাশি বসুন দুজনে । আমি যতটা জানি সেই দিয়ে চেষ্টা করবো, বাকিটা বাবা ভূতনাথের ইচ্ছা 
গুরুজি সদানন্দের আনা সেই টকটকে লাল রঙের জবাফুল যা লাল থেকে থেকে রঙ পালটে নীল হয়ে গেছিল সেগুলো আবার আর এক বার দেখে বললেন “হুম। বেশ বড় রকমের ফাঁদ পেতেছিস দেখছি এই নিরীহ ফুলগুলোকেও  বিষের ছোবল দিয়ে মারলি ।এবার  বড় গুনিন আমার কাটানের সামনে  দেখি  তোর এই নোংরা খেলা কতদুর যায়? আমার সাথে বলুন সবাই, গলা ছেড়ে বলুন  নন্দি ভৃঙ্গী সহ ভূতনাথের আজ্ঞা। বোল-বোম বাবা ভূতনাথের আজ্ঞা” ।
নারী পুরুষের মিলিত মিঠে-কড়া বোল-বোম, বোল-বো্‌ম আওয়াজে চারদিক ভরে উঠলো যেন কুসুমডিঙের আসর বসেছে ।
             

বিদেহি প্রেমিকা- দ্বিতীয় পর্ব

             বিদেহি প্রেমিকা
      #Pradip Kumar Biswas
    দ্বিতীয় পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
প্রথম পর্ব লিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_21.html

রান্নাঘরের কাছে ছোট ভাঁড়ার ঘরেই অনিলের একক শয্যা।আমরা এতে সানন্দে রাজি হয়েছে ওর অনিয়মিত আসা যাওয়া আর ওর বাহন ট্রান্সরিসিভারের নৈশ রাদেভুর কথোপকথনের আশঙ্কায়
গভীর রাত অবধি  ও ফেরে নি দেখে সবাই একটু উদ্বেগে ছিলাম । কোথাও কোনও থিয়েটারের মহলাতে আটকে আছে হয় তো ।
পরের দিন আমাদের ট্রেনিং ছিল জি এস আই চৌরঙ্গী হেড অফিসের রিমোট সেন্সিং ল্যাবে অনিলের সাথে ওখানেই দেখা হল ।
স্বভাবসিদ্ধ অসাধারন নিপুণতায় ও ক্ষিপ্রতায়  ও ওর অংশের কাজটা  তাড়াতাড়ি  শেষ করে ট্রেনিং ইন চার্জের কাছে ছুটি নিয়ে ল্যাব থেকে বেরিয়ে যাবার সময় বলে গেল “সন্ধ্যের সময় দেখা হবে তোদের সাথে” ।
ল্যাবের কাজটা বেশ শক্ত ছিল এখনকার সময়ের মত তখন  কম্পিউটার সাপোর্ট এত গভীরে ছিল না টোপোগ্রাফি বোঝবার কাজটা নিজের হাতে অঙ্ক কষে গ্রাফ প্লট করবার প্রোগ্রামিং তৈরি করে তাতে অঙ্কমানগুলো প্রবেশ করিয়ে তবে কাজ শেষ হত
শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে দিনের শেষে আমরা ফিরছি ভাড়া-বাড়িতে । সকলেই গজরাচ্ছি যে সারাদিনের  এই হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর  যে একটু স্নান করে শরীর মন ঠাণ্ডা করে  নেব সবাই, তার উপায় নেই। 
আমরা পৌঁছালেই ভ্যাম্পটা জলের ধারা সরু করে দেবেকিছু বলতে গেলে সে আরো শয়তানি করে মাঝ রাতে বিদ্যুতের কানেকশন কেটে দেবে।
মোড়ের মাথাতেই  আমাদের ভাড়া-বাড়ি । দূর থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাড়ির সামনে একটা বেশ বড় জটলা
বৃদ্ধ জয়হরির কিছু হল কি?মাঝে মাঝে শর্ট সার্কিটের দরুন সেই লেবু লঙ্কা মাড়িয়ে ফেলার ঘটনার দিন  দিন থেকে একতলায় কলিং বেল থেকে থেকে  নিজে নিজেই বেজে ওঠে।  সেইটা থেকে ললিতা ভ্যাম্পের কিছু হল না তো?
বাড়ির সামনে আসতেই  দোতলায় যাবার জন্য সিঁড়ির প্যাসেজে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন সামান্য সরে গেল ।  সেই পথে যাবার জন্য একতলার সদর দরজার সামনে এসে যা দেখলাম  তাতে গা সিউরে উঠলো ।
মস্ত বড় টাটকা সবুজ মানকচু পাতার ঠিক মাখখানে একটা বীভৎস আকৃতির বিরাট নরমুণ্ডের কঙ্কাল । তার মাথায় একটা ছোট প্রদীপ জ্বলছে ।
নরমুণ্ডের ঠিক তলাতে আড়াআড়ি করে অর্থাৎ ইংরেজি “X” অক্ষরের মতো করে,   দুটো লম্বা হাড় রাখা আছে তার তলায় রয়েছে দুটি থ্যাঁতলানো  টাটকা  লেবু ।
নরমুণ্ডে, হাড়গুলোতে এবং সবুজ মানকচু পাতার জায়গায় জায়গায়   টাটকা রক্তের ছোপ দেখা যাচ্ছে পাতার চার প্রান্তে দগদগে লাল রঙের তেলে সবুজ রঙের সলতে দেওয়া প্রদীপ জ্বলছে ।
জনতার গুজগুজ ফিসফাসে শোনা গেল বাড়ির পেছন দিকের বাগানে লেবুগাছ তলাতেও নাকি অবিকল এই রকম একটি ভয়ঙ্কর-দর্শন কঙ্কাল করোটি   সমেত মানকচু পাতা রাখা আছে ।
জনতার নিজেদের আলাপ আলোচনায় জানলাম বিশাল মানকচু পাতাতে নর-করোটি, “x” এর মত করে রাখা  লম্বা হাড় এবং আরও সব জিনিষ যা দেওয়া আছে এই পুরো সেটটির নাম “আস্থানা”। খুব বড় ওস্তাদ গুনিন ছাড়া এই রকম  আস্থানা কেউ করতে পারেন না।
আরো শুনতে পেলাম যে  যার বাড়িতে এই আস্থানা পাতা হয় সেখানে বিপজ্জনক অশরীরীরা এসে বাস করে এবং বাড়ির মালিকদের অতি শীঘ্র কোনও বড় বিপদ হবেই এবং তা আটকানো খুব কঠিন এইটা অনেকে বিশ্বাস করেন বা জানেন । 
জয়হরি ভালোমানুষ প্রবীণ লোক তাঁকে মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর বাইরে করতে দেখা গেল কিন্তু ললিতা ভ্যাম্প বাড়ির ভেতর থেকে  একটানা  কেঁদে চলেছেন আর বলছে “ কে আমাদের এই সর্বনাশ করল? আমরা তো কারো কোনও ক্ষতি করি নি”।
শেষ কথাটায় আমার নিজেদের মধ্যে চাওয়া-চাওয়ি করতে করতে সকলেই বোধহয় মনে মনে বলতে থাকলাম “কর নি আবার? এক মাস ধরে রোজ মর্জি মাফিক জল আর লাইট কেটে দিয়ে আমাদের জিনা হারাম করে দিয়েছ”।
পাড়া পড়শি সবাই এসেছে কিন্তু কঙ্কাল-করোটির আস্থানা ডিঙ্গিয়ে যাবার হিম্মত কারো হয় নি ।
একটা সমবেত গুঞ্জন শুনে সেদিকে চোখ রাখতেই দেখি লাল পুরোহিত আসছে ।এখানের লোকে তাঁকে সেই নামেই ডাকে।  
মোড়ের মাথায় অশ্বত্থ গাছতলার কালীমন্দিরে একজন লাল কাপড় পড়া পুরোহিত বসে থাকে।কারণ-বারির প্রসাদের কল্যাণে তার চোখ-জোড়া ও সব সময় লাল হয়ে থাকে ।   পাড়ার লোকজন  কয়েক জন সেই লাল পুরোহিত কে  নিয়ে আসছে ধরে ধরে অনেকটা জোর করেই