Friday, September 16, 2016

বিদেহি প্রেমিকা-প্রথম পর্ব

                              বিদেহি প্রেমিকা 

#Pradip Kumar Biswas
    প্রথম পর্ব   # ভুতের গল্প  #Bengali ghost story
পুরো ঘটনার একটা বড় অংশ এবং সুত্রপাত যার মস্তিস্কের ধুসর কোষগুলির পরিশ্রমের ফল তার আসল নাম  এখানে দেওয়া যাবে না।  মিডিয়ার বদান্যতায় অনেকেই তাকে জানেন  সে এখন একজন ভুবন বিখ্যাত মহাকাশ-ভূতত্ত্ববিদ তাই তার নাম দিলাম অনিল।
বিস্ময়কর বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি অনিলের নিজের পাঠ্য বিষয় ছাড়া গান, অভিনয় এবং ইলেকট্রনিক্সও  অসাধারন দখল ছিল
হাতের তেলোর সাইজের ট্রান্স-রিসিভার বানিয়েছিল ও যা একই সাথে ট্রান্সমিটার এবং রিসিভারের কাজ করত ।
কিছুমাস পর ওর আশপাশের রুম  থেকে খবর আসতে লাগলো প্রায়ই গভীর রাতে ও ওর ট্রান্সরিসিভারে কোনও মেয়ের সাথে কথা বলে ।
সেটা মোবাইলের যুগ নয় ।একটু দূরে  ফোনে কথা বলতে গেলেও ট্রাঙ্ককল বুক করতে হত । এও গুজব রটে গেল যে ও নাকি এই সেট দিয়ে ভুত প্রেত বা অশরীরীদের সাথে  বার্তালাপ করে । কেউ কেউ নাকি  বিচিত্র সুরে অদ্ভুত সব কথোপকথন শুনেছে আশ–পাশের রুম থেকে । 
খড়গপুরে আমাদের এই ভুবন বিখ্যাত কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে রকমারি প্রতিভার ছড়াছড়ি । ডাইনিং হলে স্পেশাল-ডে তে কারো ছেড়ে দেওয়া  ড্রোণ, প্লেট থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে যেত আস্ত মুরগির রোস্টএমনি নানারকম সব ব্যাপারে আমরা সাধারন মাপের ছাত্ররা হতবাক হয়ে থাকতাম ।
অনিল নিজে যখন ওর নামে এই রটনাটার সায় বা প্রতিবাদ কোনোটাই না করে সুচতুর ভাবে জবাব এড়িয়ে গেল তখন আমাদের বিশ্বাস আর অবিশ্বাস দুইই হল ।
থার্ড ইয়ারের শেষে খনিজ অনুসন্ধানে উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণের হাতে কলমে কাজ শিখতে কলকাতায় গিয়ে থাকতে হল গোটা গরমের ছুটিটাই।        
ওখানে থাকা খাওয়ার সুবিধের জন্য আমাদের এই সহপাঠী অনিলের উদ্যোগে আর তার হবু ডাক্তার দিদির সুপারিশে আমরা একটা বাড়ির তিন-তিনটে রুম, কিচেন আর ছোট স্টোর রুমসহ পুরো দোতলাটা ভাড়া পেয়ে যাই
নিঃসন্তান বাড়ির মালিক-দম্পতি জয়হরি আর ললিতা দাস  এক তলায় আর আমরা পুরো দোতলাটা।
কিছু দিন যাবার পর বুঝলাম এরা নামেই বৈষ্ণব কিন্তু ললিতা দাস আসলে হিন্দি সিনেমার খলনায়িকা ললিতা পাওয়ারকে অনেক পেছনে ফেলতে পারেন  
ললিতার  অত্যাচার লীলা সুরু হয়ে গেল দু’মাস অগ্রিম ভাড়ার কড়কড়ে নোট গুনে নেবার পরের দিন থেকে আমরা ওনার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নাম দিয়েছিলাম  ললিতা ভ্যাম্প
প্রায়ই সকাল-সন্ধের দিকে জল থাকতো  না। একটু রাত হলেই নিচ থেকে ভ্যাম্প ম্যাড্যাম কোনও কারসাজি করে পুরো দোতলার বিদ্যুৎ কেটে দিত
নির্বিকার  বাড়ীওয়ালা জয়হরি বাবুর  কাছে এ ব্যাপারে বলাবলি করেও লাভ কিছু হল না ।
আমাদের কষ্ট দেখে জয়হরি-ললিতা   সমবেত অষ্টপ্রহর কেত্তনের সুরে একটু  হা হুতাশ ছাড়া আর কিছুই করেন না।
আমরা যদি অতিষ্ঠ হয়ে ছেড়ে পালাই তবে লাভ তো ওনাদেরই আর সেই মতলবেই ললিতা ভ্যাম্প রোজ এই অত্যাচার-লীলা চালিয়ে যাচ্ছেন।  এই সময় এক দিন হঠাৎ একটা ব্যাপার ঘটলো।   
ছুটির দিন, সকালবেলাতেই নিচ থেকে শোনা গেল খলনায়িকা ললিতার  হাউ-মাউ করে  কান্নাআমাদের সকলের কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
রাত্রে তাহলে চোর এসেছিল নাকি?  নিজেদের জিনিসপত্রের দিকে জলদি একবার চোখ বুলিয়ে  নিচে গিয়ে দেখি ওনার দরজার কাছে প্রচুর কাঁচা লঙ্কা আর কিছু পাতিলেবু থেতলে পড়ে আছে।
সকাল বেলাতেই  বেশ কয়েকবার ডোর বেল বাজার পর বিরক্ত হয়ে  দরজা খুলে কাউকে দেখতে পান নি ললিতা  আশেপাশে কেউ লুকিয়ে থেকে বার বার বিরক্ত করার জন্য এই কাজ করছে হয়তো। এই ভেবে দরজা থেকে বেরিয়ে  উনি দরজার কাছে পড়ে থাকা লেবু আর লঙ্কা না দেখে পা দিয়ে থেতলে ফেলেন ।
লেবু- লঙ্কা  যদি কেউ পা দিয়ে থেতলেই ফেলে তাতে ভয়ের কি আছে এটা আমাদের মাথায় ঢুকলই না।   
পুরো ব্যাপারটা খোলসা হল ওপরে এসে । দেখি আমাদের রাঁধুনি গোবিন্দ মাথা নিচু করে অপরাধির মত দাঁড়িয়ে আছে।
ওকে প্রশ্ন করতেই জানা গেল কাল সন্ধ্যের সময় বাজার করে ফেরার পথে সবার শেষে নেওয়া লেবু আর লঙ্কার প্যাকেট ওর ব্যাগে ছিল সবার ওপরে
সিঁড়ির কাছে  অন্ধকার থাকায় ও হোঁচট খেয়ে নিজেকে সামলে নেয় কিন্তু সেই সময় যে ব্যাগ থেকে লেবু লঙ্কার প্যাকেটটা পড়ে যাবে  তাও আবার বাড়িওয়ালাদের দরজার কাছে সেটা ও দেখতে পায় নি।  
ওর থেকেই আমরা শুনলাম যে অনেক সময় তুক-তাক করবার জন্য দরজা-গোড়াতে এই রকম ভাবে মন্ত্রপুত লঙ্কা আর লেবু শেষরাত্রে ফেলে রাখা হয়।
সকালে বাড়ির লোক  দরজা খুলে যদি তা পা দিয়ে  মাড়িয়ে ফেলে আর তার সাথে  লেবু যদি পিষে ফেলা হয়  তাহলে তো অপদেবতার ক্রোধের আর সীমা পরিসীমা থাকে না।
ছুটির দিন আমরা যে জমিয়ে স্নান করবো বা এক দুটো জামা কাপড় কেচে নেব তার উপায় নেই। ইঁদুরের মুত্রধারার সাথে পাল্লা দিয়ে কলের ঘরে জল আসছে।
সকালের ঘটনাটা খলনায়িকা ললিতাকে তখনকার মত হতভম্ব করে দিলেও মানুষকে কষ্ট দেবার ভ্যাম্পের বুদ্ধি সমানে কাজ করে যাচ্ছে।
অনিল নিজেও এই ব্যাপারটা দেখে রাগে দুঃখে ফেটে পড়ল। ওর উদ্যোগেই আমরা এই বাড়িতে আরামে থাকব বলে এক সাথে দু’মাসের অগ্রিম ভাড়া চুকিয়ে এখানে  এসে ফেঁসে গেছি এই কথা বার বার বলতে থাকল । আমরা  ওকে চুপ করালাম।
তবে একটু পরেই দেখি ও ইউরেকা ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠছে ।আমরা কাছে যেতেই দেখি ও সেই ভর-দুপুরেই কোথাও বেরোচ্ছে । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে -সমস্যার কিছু একটা সমাধান হচ্ছেই
 আমি বলি – কিভাবে?
০ ক্রমশ প্রকাশ্য বন্ধু । তবে এটুকু জেনে রাখ শয়তান তার বধের অস্ত্র আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে। আর এই  শয়তানে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে
এক বন্ধু  উদ্বেগের সাথে বলে – তুমি এই দুপুর রোদ মাথায় করে চললে কোথা
ও বলে – গোকুলে একটা মানুষের বদমায়েশি স্বভাবের বধের জোগাড় করতে ।
ও যার কথা বলছে সে যে  কে তা আমাদের বুঝতে বাকি নেই

No comments:

Post a Comment