বিদেহি প্রেমিকা(ষষ্ঠ পর্ব)
পঞ্চমপর্বের
লিঙ্ক http://pradipstories.blogspot.in/2016/09/blog-post_53.html
#Pradip Kumar Biswas
ষষ্ঠ
পর্ব # ভুতের গল্প #Bengali ghost story
পা ভেঙ্গেছে কি না এক্স-রে না হলে বলা যাচ্ছে না তবে তাঁর
পায়ে বিশাল ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ফিরে এসে দেখি ততক্ষণে তান্ত্রিকের ফর্দ হয়ে গেছে।
ধুতি-শাড়ি আধ ডজন করে আর একটি কালো পাঁঠা অভাবে এক ডজন কালো মোরগ
চাই । এ ছাড়া অনান্য আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছু আছেই ।
জয়হরির পায়ের ব্যান্ডেজের সাইজ এবং ওনার অবস্থা দেখে ললিতা
ভ্যাম্প কাঁদতে কাঁদতে সেই দিন দুপুরেই কাটান পুজো করিয়ে নিতে রাজি হয়ে যান।
কালীবাড়ির লাল-পুরুত আর তান্ত্রিক সুযোগ বুঝে গিন্নির
কাছে হাজার খানেকেরও বেশি টাকা নিয়ে
ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুজোর সব জিনিষ নিয়ে
এসে হাজির।
এর মধ্যে আমাদের কাছে নিজের পরিবারের সকলের নামে দিব্যি
গেলে অনিল বলেছে যে আজকের ব্যাপারে সে কোনও ভাবেই জড়িত নয়। আমরা কালীবাড়ির
লালপুরুত আর তান্ত্রিকের সাজানো ঠক-বাজির ব্যাপারটা বুঝেও নিরুপায় ।
সিনিয়র দাদার
ঘরে মিটিংএর পরে স্থির হল এব্যাপারে
নীরব থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
তবে অন্যায় ভাবে ললিতা ভ্যাম্প এক দিন আগেও আমাদের যেভাবে একটানা কষ্ট দিয়েছিল
সেই সব ব্যাথাগুলো ও প্রচ্ছন্ন ভাবে এটা
একটা ঠকবাজি জেনে ও বরং কাজে সমর্থন যোগাল ।
প্রমাদ গুনলাম আমাদের যখন উনি তান্ত্রিকের কাটান অনুষ্ঠানে একতলায় আমাদের
ডেকে পাঠালেন।অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মত করে আমাদের সবাইকে যেতেই হল। জীবনে
কখনো এই সব দেখি নি। তবে যা দেখলাম তা একটা মনে রাখার মত অভিজ্ঞতা।
পুজোর আয়োজন হয়েছে
পেছনের বাগানে, লেবুগাছতলার কাছে। পুজোর জোগাড় তেমন বেশি কিছু না। মনে তো হল কালী মন্দিরেরই প্রসাদি
ফলমূল আর নৈবেদ্যর চাল লাল পুরুত নিয়ে এসেছে।এক আধটা ধুতি-শাড়িতে আর কিছু গোটা ফলে তো বাসী সিন্দুর
তখনো লেগে আছে।
কালোপাঁঠার জায়গায় কালো মোরগ এক ডজন এসেছে । সেগুলো বাগানের উত্তর প্রান্তে বাঁধা আছে। আমাদের রাঁধুনি গোবিন্দ সেগুলো দেখে আমাদের
ফিসফিসিয়ে বলে যে সব কটাই মোরগ নয়, কিছু মুরগিও আছে। মুরগিগুলোর মধ্যে বেশ কিছু
নাকি সদ্য কালো কলপ দিয়ে রঙ করা । এক-দুটোর তো পায়ের
কাছে কালো রঙ পুরো লাগে নি, অরিজিনাল সাদা দেখা যাচ্ছে।
ভালো! মুরগি করবার অনুষ্ঠানে কালো কলপ লাগানো মুরগি তো
আসবেই।
লাল পুরুত আর তান্ত্রিক দুজনে লাল কাপড় পরে সদ্য
কারনবারি পান করেই কাটান পুজোতে বসেছে। তান্ত্রিক একটি তালপাতার পুঁথি এনেছে আর
তার পাশে এক জন ভৈরবীও বসে আছে ।
পুঁথি দেখে তান্ত্রিক জড়ানো গলায় কিছু বলছে আর লাল পুরুত
সে গুলোই আবার বলছে । অবশ্য কালকের
গুরুজির মতই এক এক বার তিনজনেই মিলিত হুঙ্কার ছাড়ছে “ওঁ জয় বাবা ভূতনাথের আজ্ঞা। শ্মশানে
আছিস কে?” । ভৈরবীর গলার সুর অনেকটা মাঝ রাতে শেয়াল ডাকার মত ।
এর পর পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে আমাদের একজনের কাঁধে ভর দিয়ে জয়হরি বসলেন টুলে আর তার পাশে
কম্বলের নকলি বাঘছাল প্রিন্ট আসনে আসন-পিঁড়ি করে বসলেন ললিতা ভ্যাম্প ।
চার চারটে বিশাল ধুনুচির ধোঁয়াতে দম বন্ধ হয়ে আসে। ধোঁয়াতে
ধুনোর সাথে আরও অন্য কিছু নিশ্চয় মেশানো ছিল।
নেহাত খোলা বাগান আর ব্যাপারটা কি হচ্ছে সেইটা জানবার বা
দেখবার কৌতূহল।তাই আমরা ধোঁয়া সহ্য করে একটু সরে গেলাম বটে কিন্তু বাগানের এক কোনেই রইলাম।
এইবার দেখি এরাও কালকের গুরুজির মত বিড়-বিড় করে কি কি সব
মন্ত্র পড়ছে আর সরষেদানার মত বস্তু জয়হরি আর ললিতা দু’জনকেই ছুড়ে ছুড়ে মারছে।
ভৈরবী একটা চামর বার করে মন্ত্র পড়ে আর দুজনের গায়ে তা বুলিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার এই
রকম করার পর ভৈরবী এসে তান্ত্রিককে কিছু বলে।
লালপুরুত আর তান্ত্রিকের কাঁধে ভর দিয়ে জয়হরি একটু দূরে
বাগানের এক কোনে বসে। এবার ভৈরবী মাঝরাতের শেয়ালডাকা গলায় হিং ক্রিং, হিং ক্রিং,
জয় মা তারার আজ্ঞা এই সব কিছু বলে কয়েকবার চিৎকার করে আকাশের দিকে মুখ উচু করে
শেয়ালের মত করে ডাকবার পর ধুনুচিতে
কতোগুলো নীল সাদা গুলি ছুড়ে মারল আর জয় মা তারা,জয় মা তারা বলে এবার প্রায় দৌড়ে এগিয়ে
গেল ললিতার দিকে ।
ললিতাভ্যাম্পের মাথায় অন্যকে কষ্ট দেবার শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল করতে থাকলেও
আসলে বেশ নার্ভাস টাইপের । কালকে গুরুজির জাদুর খেলার শেষ দিকে তো অজ্ঞানই হয়ে
গেছিল ।
এখন ভীষণ দর্শনা ভৈরবীকে হাতে জ্বলন্ত ধোঁয়া ওঠা ধুনুচি নিয়ে তার
দিকে তেড়ে আসতে দেখে ভয়ে উঠে পালাতে যাচ্ছিল । কিন্তু
ভৈরবী তার পথ আগলে দাঁড়ালো । “পালিয়ে তুই যাবি কথায়? আজ তো তোর কপালে
অনেক দুঃখু আছে। চল বসবি চল”।
ললিতা কাঁদো কাঁদ স্বরে চিঁ চিঁ করে বলে“ না, না আমি আর
বসব না”। ততক্ষণে লালপুরুত এগিয়ে এসেছে
একটা মুড়ো ঝাঁটা নিয়ে ।
বেগতিক দেখে ললিতা ভ্যাম্প এবার বসে পড়তেই তার কাছে
ধুনুচি নিয়ে এসে ভৈরবী বলে “ বল তুই থাকিস কোথা? এই ভালমানুষের বউটাকে কেন ভর করেছিস”
নার্ভাস ললিতাভ্যাম্প তখন নিজের বাড়ি দেখাতে গিয়ে লেবু
গাছটাকে দেখিয়ে দেয় ।
ভৈরবী এবার শেয়াল ডাকা গলায় আওয়াজ চড়িয়ে বলে“ও ভৈরব
দেখলে তো, পেতিটার ডেরা অই লেবুগাছটা। আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম। বাঁধো ওটাকে অই খানে আর আমি দেকছি বাকীটা।”
ভৈরবী এবার ললিতা ভ্যাম্পের কাছে এসে বলে “কিরে যাবি একে
ছেড়ে না অন্য ডোজ খাবি?”
“ না, না আমায় আর কিছু করো না। আমি এখনই যেতে পারব না।
উঠতে পারছি না” ।
“যাবি না তাহলে, এই তোর শেষ কথা? এখনো বলছি উঠে দাঁড়িয়ে চলে যা ।
আমায় দেখা তুই গেছিস বলে।”
No comments:
Post a Comment